নোয়াখালীতে রেকর্ড ২৭৭ মি.মি. বৃষ্টি, ডুবেছে ডিসি-এসপির অফিস
নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টার টানা বর্ষণে ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা নোয়াখালীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ভারী বর্ষণের ফলে পৌর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এমনকি ডিসি-এসপি, স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস পানিতে ডুবেছে। তলিয়েছে বিভিন্ন সড়ক।
শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত রেকর্ড বৃষ্টিপাতের তথ্য জানান নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম।
শুক্রবার ভোর থেকে নোয়াখালী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের প্রধান সড়কের একটি অংশ ছাড়া সবগুলো সড়ক ও এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের সব কয়টি সড়ক ও পাড়া-মহল্লার রাস্তাগুলো দেড় থেকে আড়াই ফুট পানিতে নিমজ্জিত। বহুতল ভবনগুলোর নিচতলার বাসায় পানি ঢুকে পড়ায় রান্নাবান্না ব্যাহত হচ্ছে।
পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে এবং পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে।
দুপুর পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন দপ্তর সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জলাবদ্ধতা কবলিত হয়েছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচের কক্ষ, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা আবহাওয়া অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, প্রেসক্লাব, রেডক্রিসেন্ট, বিআরডিবি, ম্যাটস্, বিদ্যুৎ অফিস, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কক্ষ, শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম, বন বিভাগের বাংলো, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, মাইজদী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি অনেক অফিস।
এদিকে জেলার প্রধান সড়কের একটি অংশ’সহ টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, ডিসি সড়ক, মহিলা কলেজ সড়ক, জেল খানা সড়ক, মাইজদী বাজার সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক এখন কয়েক ফুট পানির নিচে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জীবিকার তাগিদে বের হওয়া শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, নোয়াখালী পৌরসভা দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভাগুলোর একটি। দীর্ঘদিন ধরে এ শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়নি। কালেভাদ্রে কয়েকটি ড্রেনের কাজ করা হলেও সেগুলো নিম্নমানের। হালকা বৃষ্টিতেই এসব ড্রেন দিয়ে পানি নামতে অনেক সময় লাগে।
নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২পর্যন্ত ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি নোয়াখালীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। ভারী বর্ষণের ফলে আমার অফিস ও সড়ক ডুবেছে। আমিও জলাবদ্ধতায় আটকে আছি।’
সকাল থেকে জলাবদ্ধ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে নোয়াখালী পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, ‘শহর থেকে পানি ড্রেনে যাচ্ছে, আর ড্রেন থেকে পানি নোয়াখালী খালে যেতে বাধা পাচ্ছে বলে আমার পর্যবেক্ষণ। এর প্রধান কারণ শহরের খালগুলো অবৈধভাবে দখল করে কিছু অসাধু ব্যক্তি স্থাপনা নির্মাণ করেছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বসে এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।‘ এ ছাড়া মাস্টার প্লানে তাদের একটি প্রকল্প আছে, যা বর্ষার পরে কাজ শুরু হবে বলে জানান মেয়র।
এদিকে জেলার ৯টি উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চলেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ভেসে গেছে কয়েকটি মাছের ঘের।
(ঢাকাটাইমস/২আগস্ট/মোআ)