সরকারহীন যেমন চলছে দেশ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে। সরকারবিহীন এই সময়জুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় নানা সমস্যা। পুলিশশূন্য দেশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নেমেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তা পরিষ্কার করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুধু রাস্তা পরিষ্কার করাই নয় বরং সাধারণ যাত্রীদের রাস্তা পারাপার হতে সাহায্য করছেন তারা। এদিকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রাস্তা পরিষ্কারের কাজেও দেখা গেছে। ঝাড়ু, বেলচা ও বড় বড় পলিথিন হাতে তারা ৩০-৪০ জনের দল প্রায় সারাদিন কাজ করছেন।
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, আমরা প্রায় সারাদিন কাজ করি। বিভিন্ন দল, উপদল মিলিয়ে সবাই কাজ করি। আমাদের কাজের কোনো লিমিটেশন নেই। যেকোনো ভলান্টিয়ার সংগঠন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্বাভাবিক চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে নিয়মিত চিকিৎসা পাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতিতেও আমাদের সেবাদান স্বাভাবিক রয়েছে। বুধবার শুধু ১২ হাজার রোগীকে আমরা সেবা দিয়েছি। যেখানে আইসিইউতে ৩২ সিটের বিপরীতে ২৯ সিট পূর্ণ ছিল। যদিও কেবিন কিছু খালি ছিল।
জরুরি বিভাগে পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউর রহমান বলেন, দিনে আউটডোরে ১৯০০ রোগী সেবা নিয়েছে, আর সন্ধ্যায় ৮৪৫ জন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় এখনো স্বাভাবিক হয়নি। মন্ত্রণালয়ে উপস্থিতি খুবই কম। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। তবে কর্মচারীদের উপস্থিতি তুলনামূলক ভালো ছিল।
বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা যায়, যারা এসেছেন, তারা অলস সময় পার করছেন। একাধিক কর্মকর্তা জানান, এখন তো কার্যত সরকার নেই। তাই কাজও নেই। অনেক কর্মকর্তার রুমে গিয়ে দেখা যায় তারা আসেননি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা যায়, মুহসীন হল, সূর্যসেন হলে, বিজয় ৭১, জিয়া হল, বঙ্গবন্ধু হল, জসিমউদদীন হল, রোকেয়া হলসহ সব হলেই শিক্ষার্থী রয়েছে।
তারা জানান, বহুদিন পর একটি স্বাধীন ক্যাম্পাস পেয়েছি। এখন আর কেউ আমাদের নির্যাতন করতে পারবে না। কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করতে পারবে না। জোর করে মিছিল-মিটিংয়ে নিয়ে যাবে না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোথাও ট্রাফিক পুলিশ নেই। এতে সড়কে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শিক্ষার্থীরাই নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কে যান চলাচল এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন।
(ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/এএইচ/কেএম)