টাঙ্গাইলে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতির পদত্যাগসহ বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এলাকাবাসী এবং বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
রবিবার সকালে স্থানীয় ইসকন মন্দির থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে মানববন্ধন ও প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে আন্দোলনকারীরা।
এ সময় প্রধান শিক্ষক দ্বীন বন্ধু প্রামানিক এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। তারা অবিলম্বে এ দুজনের পদত্যাগ বা অপসারণ চেয়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারীরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক দ্বীনবন্ধু প্রামানিক একজন দলবাজ চরিত্রহীন। তার কাছে ছাত্রীরা নিরাপদ নন। তিনি সন্ত্রাসী এবং দলীয় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি নিজের নিয়োগের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন নিজেই তৈরি করেছেন। যার প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। তিনি ধর্মীয় শিক্ষক থেকে সরাসরি প্রধান শিক্ষক হয়ে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। এছাড়া তিনি বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক করেছেন। পরকীয়ায় আসক্ত এক নারীকে বিয়ে করতে তিনি হিন্দু থেকে মুসলিম হয়ে দীন ইসলাম নাম ধারণ করেন। গোপনে বিয়ের পর ওই নারীর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন দাবি করেন তিনি মুসলিম থেকে আবার হিন্দু হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ও ভীষণ ক্ষুব্ধ।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। কিন্তু জেলা পর্যায়ের দাগি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই মামলার কার্যক্রম বন্ধ করিয়ে দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক এসব অপকর্ম করেছেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়, অবৈধ অর্থ এবং সন্ত্রাসীদের পেশিশক্তির সাহায্য নিয়ে।
ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত ‘বড় মনিকে’ প্রধান শিক্ষক নিজের অপকর্ম হাসিলের জন্য পরিচালনা কমিটির সভাপতি করেছিলেন। সভাপতি বিদ্যালয়ে যেতেন না, শুধু অবৈধ টাকার ভাগ-বাটোয়ারা বুঝে নিতেন। দেলদুয়ার উপজেলায় অনেক শিক্ষানুরাগী, এমপি ও যোগ্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ থাকতেও নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রধান শিক্ষক অন্য উপজেলার একজন চিহ্নিত আসামিকে সভাপতির পদে বসিয়েছেন, যা শিক্ষা প্রসারে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের পুকুরের মাছ বিক্রি, মাটি বিক্রি, গাছ বিক্রি এবং ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতেন। তারা অবৈধ বাণিজ্যের মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি টাঙ্গাইল শহরে অবস্থান করায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মনিটরিং হতো না। প্রধান শিক্ষকের অনীহায় জাতীয় কোনো কর্মসূচিই স্কুলে পালন করা হয় না। এসব কারণে শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে, ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দেলদুয়ার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমি বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়েছে। আর্থিক দুর্নীতি ও চারিত্রিক অবক্ষয়সহ লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেখানে প্রধান ৮টিসহ মোট ১৩টি অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগটি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকেও দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৮আগস্ট/পিএস)

মন্তব্য করুন