চেয়ারম্যান বলেন, এমন ভাঙন কত হয়!
কুড়িগ্রামে বাড়ি-জমি হারিয়ে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

‘স্বামীর ভিটাও গেল, শ্বশুরের ভিটা গেল, এখন আমরা কই যামু। আপনেরা আমাদের থাকনের ব্যবস্থা করেন।’ একরকম আর্তনাদ করে বললেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাবখাঁ গ্রামের গৃহবধূ নাজমা বেগম। পাশে স্বামী ছমির উদ্দিন জানান, এই নিয়ে তিনবার বাড়ি ভাঙল তাদের। এখন থাকনের কোনো জায়গা নেই।
কিন্তু এসব অসহায় মানুষের আর্তনাদ শুনতে নারাজ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক। কথা বলতে চাইলে তার ক্ষুব্ধ ভাষ্য, ‘ছয়-সাতটা বাড়ি ভাঙার খবর করার জন্য সাংবাদিক আসা লাগবে! এমন ভাঙন কতো হয়! লিখি কী হবে।’
গত ১৫ দিন ধরে তিস্তা নদী তীরের এই এলাকার সরিষাবাড়ি শ্যালোঘাট থেকে পূর্বে চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই দিকে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও এখানে রঙধনু আকারে ভাঙছে সর্বগ্রাসী তিস্তা নদী।
এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল আলম জানান, গত ১৫ দিনে এখানে ৯টি বাড়ি ভেঙেছে। ভাঙনের মুখে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫০-৬০টি বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে।
গত সাত দিনে ফকির উদ্দিন, সোনা মিয়া, মোন্নাফ, চাঁদ মিয়া, মতিয়ার, আতিয়ার, আনম, আজিজুল ও বাবলুর বাড়ি ভেঙেছে নদী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল ভাঙনকবলিত মানুষের দুর্দশা। নদী এই শান্ত তো এই ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। গ্রামের ফসলি জমিন চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। কৃষকের চোখে-মুখে বসতবাড়ি আর জমি হারানোর বেদনা। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েও কোনো সাড়া পায়নি তারা।
কৃষক হামিদ আলী বলেন, ‘আমার এক একর আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন পথে বসার অবস্থা।’
জাহেদা বেগমের কণ্ঠে হাহাকার, ‘নদী ভাঙতে ভাঙতে শেষ মাথায় চলে আসছি। এখন মানুষের হাত-পা ধরেও থাকনের জায়গা পাইছি না। কই যামু আপনেরা কন!’
ভাঙনকবলিত এলাকা ও মানুষের বিষয়ে জানতে এই প্রতিবেদক কথা বলেন স্থানীয় ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিকের সঙ্গে। কিন্তু এমন ভাঙন তার কাছে কোনো বড় কিছু নয়। তিনি এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক বলেন, ‘ছয়-সাতটা বাড়ি ভাঙার খবর করার জন্য সাংবাদিক লাগে! আপনারা কোনো কাজ করেন না, শুধু বিরক্ত করতে আসেন। আমি কোনো বক্তব্য দিব না। এমন ভাঙন কত হয়!’
ভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, বাজেট সংকটের কারণে তারা তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা দিতে পারছেন না। তবে স্কুলটি রক্ষায় ইতোমধ্যে ৩০০ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আরও জিও ব্যাগের জন্য চাহিদা দেয়া হয়েছে। এখন সীমিত আকারে পাচ্ছি। ফলে আমাদের ইচ্ছে থাকলেও সব ভাঙনকবলিত এলাকায় যেতে পারছি না।’
(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/মোআ

মন্তব্য করুন