সরকার পতনের পর সিদ্ধিরগঞ্জে ১৩ হত্যাসহ একমাসে ৩৯ মামলা
দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় টানা ক্ষমতায় থেকে গেলো ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আ.লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে বিরোধী দল ও সাধারণ জনতাকে হামলা, মামলায় জর্জরিত করে রাখা হতো। তবে, পট পরিবর্তনেই সারাদেশে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের হচ্ছে। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জেও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সরকার পতনের প্রায় এক মাসে বিদায়ী সরকারের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় ১১টি হত্যাসহ ১৬টি রাজনৈতিক মামলা রুজু হয়েছে। এরমধ্যে থানা ভাঙচুর ও আন্দোলনে হত্যার বাইরে দুটি খুনের মামলাও রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে শোনা যায়নি।
অর্থাৎ আগস্টে পুলিশি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় একমাসে ১৩ হত্যাসহ মোট ৩৯টি মামলা হয়েছে। এসবের মধ্যে ১৬টি মামলায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নিহতের ঘটনায় আগস্টে ৯টি, সেপ্টেম্বরে ২টি এবং অন্য দুটি খুনের ঘটনায় এই ১৩ হত্যা মামলা হয়েছে।
এছাড়া থানা ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে একটি। সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে আরও দুটি। এই ১৬ মামলার সবগুলোতেই বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা আসামি হয়েছেন। একাধিক মামলায় বিএনপি ও অন্যান্যরাও আসামি হয়েছেন।
এসব মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রায় ১ হাজার জনেরও বেশির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও অনেককে। আর থানা লুটপাটের মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৫ হাজার জনকে।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সবশেষে ১ জুলাই আন্দোলনে নামেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সেই আন্দোলনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে স্বৈরাচার আ.লীগ সরকারের নেতাকর্মী আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক হামলা চালানো শুরু করে।
একপর্যায়ে ১৫ জুলাইয়ের পর থেকে দেশব্যাপী গণহত্যায় নামেন তারা। আন্দোলনে দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত সংঘর্ষ-সংঘাতের ঘটনা বেশি ঘটেছিল। এতে সিদ্ধিরগঞ্জ অংশেই ১৮ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ২৫ জন ছাত্র-জনতা হতাহতের তথ্য মিলেছে। তবে, স্থানীয়দের মতে মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হবে।
টানা ৩৬ দিনের তীব্র আন্দোলনে শতশত শহীদদের রক্তের বিনিময়ে নতুন করে স্বাধীনতার মুখ দেখেন দেশের মানুষেরা।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা গা-ঢাকা দেন। আর সেদিন বিকালেই বিক্ষুব্ধ জনতা সিদ্ধিরগঞ্জ পুলিশের কার্যালয়সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। থানায় হামলার পর থেকে বেশকদিন পুলিশি সেবা থেকে বঞ্চিত হন জনসাধারণ। পরবর্তীতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনায় থানা পুলিশের কার্যক্রম চালু হলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যার শিকার হওয়াদের পরিবারের সদস্যরা একের পর এক মামলা দায়ের করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের তথ্য মতে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় গত আগস্ট মাসে হত্যা মামলা ৯টি, থানা ভাংচুর করে লুটপাটের ১টি, অন্যান্য খুন ২টি। তাছাড়া মাদক, নারী-শিশুসহ সবমিলিয়ে এই মাসে মোট মামলা হয়েছে ২৯টি।
এছাড়া সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মোট ১০টি মামলা রুজু হয়েছে। এরমধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় ২টি, রাজনৈতিক মামলা ২টি।
হত্যা মামলাগুলোর মধ্যে বিদায়ী সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা, সাবেক সড়কমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদত ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, জুনায়েদ আহমেদ পলক, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান, সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী, সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু, সাংসদ সেলিম ওসমান, মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ জেলা-মহানগর ও সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যায়ের অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ হত্যা মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা, শামীম ওসমানকে করা হয়েছে।
এদিকে ঢালাও মামলায় শুধু আওয়ামী দলীয় লোকজনই নয় মামলাগুলোর কয়েকটিতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই এমন ব্যক্তিবর্গ, বিএনপি সমর্থক ও ব্যবসায়ীর নাম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এখন পর্যন্ত রুজু হওয়া মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি সদ্য জয়েন করেছি থানায়। আমাদের নিয়মিত সকল পুলিশিং কার্যক্রম চালু রয়েছে। আশা করছি আর অল্প সময়ের মধ্যেই সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারবো।’
হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অতি শীঘ্রই আসামিদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযানে নামবো। সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/এসআইএস)