মিথ্যা অপপ্রচার বরদাশত করা হবে না: নবীউল্লাহ নবী
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবীর নাম জড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে দাবি করে— তা বরদাশত করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতা।
সোমবার এক বিবৃতিতে যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত জাহাঙ্গীর আলম হত্যা মামলার বাদীর সঙ্গে নাম জড়িয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় একথা বলেন বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবী।
বিষয়টি খোলাসা করে নবীউল্লাহ নবী বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে সারাদেশের বিভিন্ন থানায় একের পর এক মামলা হচ্ছে। বিষয়টি বিগত দিনের অন্যায়-জুলুম, নির্যাতন, গুম-খুন ও দুর্নীতির বিচার দাবিতে এখন এটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এসব মামলায় আওয়ামী সরকার প্রধান শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে তার মন্ত্রী, এমপি, নেতাকর্মী এবং তাদের আজ্ঞাবহ বিচারপতি ও বিভিন্ন পর্যায়ে আমলাদের আসামি করা হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী থানাতেও এধরনের একাধিক মামলা হবে- এটাই স্বাভাবিক। এর সঙ্গে রঙ লাগিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার বরদাশত করা হবে না।’
নগর দক্ষিণ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম হত্যা নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় দুটি মামলা করেছেন আবু বক্কর নামের এক ব্যক্তি। অথচ যাত্রাবাড়ী থানার এই মামলা হওয়া নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যেখানে মামলার বাদীর সঙ্গে আমার কোনো যোগ বা সংশ্লিষ্টতা নেই, সেখানে আমাকে জড়ানোর বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক ও মানহানিকর। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
নবীউল্লাহ আরও বলেন, ‘মূলত ওই দুটি মামলাতেই (জাহাঙ্গীর আলম হত্যা) শেখ হাসিনাসহ ৪৪২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও তিন থেকে চার হাজার অজ্ঞাতদের আসামি করেছেন বাদী আবু বক্কর। সেখানে আসামির তালিকায় নাম রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরও। অথচ এই মামলায় জড়িয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বলা হচ্ছে, আমি নাকি এসব করাচ্ছি বা আমার পরোক্ষ ইঙ্গিত রয়েছে। যেখানে টেনে আনা হয়েছে আমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুরনো কিছু ইস্যুও। এখন যে কথা না বললেই নয়- মাসুদ হাসান পাটোয়ারী নামের পরিবেশ অধিদপ্তরের যে পরিচালককে সাত নম্বর আসামি করা হয়েছে, তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এছাড়া বিগত দিনে নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যার ফলে মাসুদ হাসান পাটোয়ারী এখন ওএসডি হয়েছেন। এছাড়া তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এমন খবরও লোক মুখে শোনা যায়। এছাড়া মাসুদ পাটোয়ারী একসময় সাবেক বিচারপতি খায়রুল হকের একান্ত সচিবও ছিলেন। এছাড়া মামলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অন্যান্য যে কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে তারাও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। এমনকি মাসুদ হাসান পাটোয়ারীর মতো তারাও অতীতে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক এই কমিশনার বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি ওই দুটি মামলায় মাসুদ হাসান পাটোয়ারী ছাড়াও আসামির তালিকায় রয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইলিয়াস মাহমুদ, সহকারী পরিচালক (ঢাকা অঞ্চল) মুক্তাদির হাসান, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলাম, ব্যবসা-বাণিজ্য শাখার অফিস সহকারী-কাম-মুদ্রাক্ষরিক মোশাররফ হোসেন, অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম ও অফিস সহায়ক জাফর সিকদার। যাদের সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী। এমনকী মাসুদ হাসান পাটোয়ারীর মতো তারাও অতীতে নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং অবস্থান নিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষেও।’
‘বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে সদ্য ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত- এই সব সরকারি আমলারা কোন ভূমিকায় ছিলেন তা সারাদেশের মানুষই প্রত্যক্ষ করেছেন। তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত মুহূর্তেও তারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন’ বলেন নবীউল্লাহ নবী।
নবীউল্লাহ বলেন, ‘এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশের সব থানাতেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। অথচ যাত্রাবাড়ী থানার এই একই ধরণের মামলা হওয়া নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যেখানে মামলার বাদীর সঙ্গে আমার কোনো যোগই নেই, সেখানে আমাকে জড়ানোর বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক ও মানহানিকর। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এসআইএস)