ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছি: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে ফ্যাসিজমের অনেক প্রেতাত্মা অবস্থান করেছে। তারা এখনো ছাত্র-জনতার বিজয়কে ব্যর্থ করতে ষড়যন্ত্র করেছে। ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিনিময়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছি, এটা হেলায় ফেলায় হারানো যাবে না।’
মঙ্গলবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তব্য দেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা।
সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সবসময় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে। শুধু ৫২, ৭১ নয়। গণতন্ত্র যেন সাসটেইনেবল হয় সে জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, সেটি যেন হেলায় হেলায় ফেলে না দেই।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের মধ্যে ফ্যাসিজমের অনেক প্রেতাত্মা অবস্থান করেছে, তারা এখনো আমাদের বিজয়কে ব্যর্থ করতে ষড়যন্ত্র করেছে।’
এসময় বর্তমান সরকারের কাছে আন্দোলনে প্রতিটি আহত, পঙ্গু ও শহীদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘একদলীয় শাসনকে বিতাড়িত করে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্টা করেছিলেন। খালেদা জিয়া কেয়ারটেকার ব্যবস্থা করে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আবারো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বিএনপি।’
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংস্কার কাজে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে।’
সমাবেশে ব্যবস্থাপনা সমন্বয় করেন স্থায়ী কমিটি সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল। সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং তানভীর আহমেদ রবিন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আব্দুস সালাম আজাদ, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুলসহ বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী। ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার কয়েক হাজার নেতাকর্মী এতে উপস্থিত হন।
পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়ার মধ্য দিয়ে সমাবেশ বেলা আড়াইটায় শুরু হয়। সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর নয়াপল্টনে জনতার ঢল নামে। তীব্র রৌদতাপ উপেক্ষা করে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। নেতাকর্মীদের হাতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠে। রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটি থেকে ছোট ছোট মিছিল আসে। সমাবেশ কেন্দ্র করে কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, শান্তিনগর, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। ভিআইপি রোগের দুপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/জেবি/এসআইএস)