ওজনে কারচুপির আশায় বেনাপোল বন্দর ছেড়ে আমদানিকারকরা ছুটছেন ভোমরা বন্দরে 

বেনাপোল প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:৩৬

বেনাপোল বন্দরে ওজনে কারচুপি বন্ধ হওয়ায় ফল ও টমেটোসহ উচ্চ পচনশীল পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফল আমদানিকারকরা রাজস্ব ফাঁকির আশায় বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ছুটছেন সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে। এতে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবারও আমদানি বেড়েছে এ স্থলবন্দর দিয়ে। বেনাপোল বন্দরে আমদানি করে যাওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমনটাই বেরিয়ে এসেছে।

এ কারচুপির মাধ্যমে বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও লাভবান হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আমদানিকারক রাজন আলী জানান, বেনাপোল স্থলবন্দরে ডিজিটাল ওয়েইং (ওজন) স্কেলে ফল, টমেটো ও মাছসহ অন্যান্য পচনশীল পণ্য ওজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু ভোমরা বন্দরে ব্যবহার করা হয় ম্যানুয়াল ওজন স্কেল। সেই ক্ষেত্রে ওজনের একটা বিরাট তারতম্য ঘটানো হচ্ছে এই বন্দরে। ম্যানুয়াল ওজন স্কেলের মাধ্যমে তারা আমদানিকৃত পণ্যের বিরাট অঙ্কের শুল্ক ফাঁকি দিতে সক্ষম হচ্ছে। আর এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত খোদ ভোমরা স্থলবন্দর ও কাস্টমসের কর্মকর্তারা।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে আপেল ভর্তি একটি ট্রাক ঢোকে ভোমরা বন্দর দিয়ে। ঢোকার আগে ওপারে আরেক ভারতীয় ট্রাকে মাল লোড করা হয়। এরপর সেই ট্রাক ভোমরা বন্দরে ঢোকে ১৮ সেপ্টেম্বর। ট্রাকে থাকা আপেলের ওজন (ক্যারেটসহ) ছিল ২৮ হাজার ৯২০ কেজি। কিন্তু ভোমরা বন্দরের ওজন স্কেলে মাপা হয় ২৭ হাজার ৮২৮ কেজি। অর্থাৎ, এখানে ওজন কারচুপি হয়েছে ১ হাজার ৯২ কেজি।

এই পণ্যের আমদানিকারক ছিলেন সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকার মেসার্স পারভেজ ট্রেডার্স। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ভারতের মেসার্স বিশাল ফ্রুটস এজেন্সি। আর এই পণ্যটির খালাসের দায়িত্বে ছিল মেসার্স আল মদিনা।

একই দিন আপেল ভর্তি আরেকটি ট্রাক আসে ভারত থেকে। সেখানে ক্যারেটসহ ওজন ছিল ২৭ হাজার ৫৮২ কেজি। ভোমরা বন্দরের ওজন স্কেলে সেটি কারচুপি করে দেখানো হয় নিট ওজন ২১ হাজার কেজি। এই চালানটিতে ৬ টন ৫৮২ কেজি ওজন ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে ফল ও মাছ আমদানির নামে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোমরা বন্দরের সংশ্লিষ্টরা এই অপকর্মটি করে থাকেন। ভারত থেকে ট্রাকে আসা আপেল বা টমেটো ভর্তি ক্যারেটের সংখ্যা তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০টির অধিক নয়। কিন্তু সেখানে এই সংখ্যা দেখানো হয় ৩২শ’ থেকে ৩৩শ’ পিস।

বন্দর ব্যবহারকারী মো. রয়েল জানান, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় প্রতিদিন ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৭৫-৮০ ট্রাক পচনশীল পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। অপরদিকে, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে শুধুমাত্র মাছ আসছে।

আমদানিকারকরা ভোমরা বন্দর ব্যবহারের ফলে ট্রাকপ্রতি দেড় থেকে দুই টনের বেশি শুল্ক ফাঁকির সুযোগ পাচ্ছেন। সে কারণে তারা এই বন্দর ব্যবহারে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আর সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আকতার হোসেন জানান, চলতি মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি খুবই কম হয়েছে। সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় বেশির ভাগ আমদানিকারক ভোমরা বন্দর ব্যবহার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে রাজস্ব আদায়ের সুনাম আছে, তা ম্লান হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে তিনি শুল্ক গোয়েন্দাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ছেন।

আরও একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী রিয়েল ইন্টারন্যাশনাল বলেন, ভারতের নির্দিষ্ট কিছু ট্রাক আছে। যেসব ট্রাকের ওজন দেড় থেকে দুই টন কম দেখিয়ে এন্ট্রি করা হয়। এর ফলে মালের পরিমাণ বেশি এনে কম দেখানো এবং শুল্ক পরিশোধে অবৈধ সুযোগ নেওয়া যায়। তিনি জানান, আপেল, আনার, কাঁচা মরিচ ইত্যাদির আমদানি এখন ভোমরা বন্দর দিয়ে বেশি হচ্ছে। ওজন স্কেলে ফাঁকি দিতে পারায় আমদানিকারকরা সেদিকেই ঝুঁকছেন। এভাবে চলতে থাকলে বেনাপোল স্থলবন্দর মুখ থুবড়ে পড়বে। আর সরকারও হারাবে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভোমরা স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ইন্ডিয়ান ওজন স্লিপের উপরে আমাদের কোনো ডিপেন্ডেন্সি নাই। আমাদের ওজন স্কেলে যে ওজন হয়, আমরা সেই ওজনই ধরবো। ভোমরা বন্দরে বিন্দুমাত্র কোনো কারচুপি করা হয় না।

খুলনা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. আতিকুজ্জামান জানান, ওজন স্কেলের কারচুপি নিয়ে যে অভিযোগটি উঠেছে এটি সত্য নয়, ভোমরা বন্দরে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই ট্রাক সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা, কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শতভাগ পণ্যের ওজন করা হয়। ওজনে কারচুপি করার কোনো সুযোগ নাই।

(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :