এবার লেবাননের রাজধানীতে ইসরায়েলি বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১২
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোগাযোগ যন্ত্র পেজার ও ওয়াকিটকি হ্যাক করে বিস্ফোরণ ঘটানোর পর এবার দেশটির রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত পাঁচ শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও কমপক্ষে ৬৬ জন আহত হয়েছে, যার মধ্যে আটজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, শুক্রবার বিকালে দক্ষিণ বৈরুতের দাহিইয়ের এলাকার একটি আবাসিক ভবনের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিয়ে দুইবার হামলা চালায় ইসরায়েল।
বিমান হামলার পর একজন সিনিয়র ইসরায়েলি কর্মকর্তা ইসরায়েলি আর্মি রেডিওকে বলেছেন, হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। তবে হত্যা প্রচেষ্টা সফল হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
এদিকে হামলার প্রতিক্রিয়ায় লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, এই বিমান হামলা আবারও প্রমাণ করে যে, ইসরায়েলি শত্রু কোনো মানবিক, আইনগত বা নৈতিক বিবেচনাকে গুরুত্ব দেয় না এবং এটি অবশ্যই একটি গণহত্যা।’
এর আগে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ লেবাননের জেজিন শহরের মাহমুদিহ, কাসর আল-আরুশ ও বিরকেট জাব্বুর এলাকায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, লেবাননে প্রায় ১০০টি রকেট-লাঞ্চার ও অন্যান্য অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে দেশটির বিমানবাহিনী। তবে হামলায় হতাহতের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবারই লেবাননে সবচেয়ে বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
এছাড়া গত মঙ্গল ও বুধবার লেবানন ও সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর তারহীন যোগাযোগ যন্ত্র পেজার ও ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে অন্তত ৩৭ জন নিহত ও প্রায় তিন হাজার মানুষ আহত হয়।
লেবানন সরকার ও হিজবুল্লাহ বলছে, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে এসব বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তবে এসব বিস্ফোরণ নিয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি ইসরায়েল।
দুই দিনের বিস্ফোরণের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ভাষণ দেন। সিরিজ বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ‘সব ধরনের সীমা’ লঙ্ঘন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গাজা যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পরদিন থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রায় প্রতিদিন রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সীমান্ত থেকে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ)।
প্রায় ১১ মাস ধরে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ৬০০ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। হিজবুল্লাহর পাল্টা হামলায় অন্তত ১৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং ১১ জন বেসামরিক ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এছাড়া দুপক্ষের যুদ্ধের কারণে গত ১১ মাসে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের দুই প্রান্ত থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
অন্যদিকে গত মাসে বৈরুতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে হত্যা করে ইসরায়েল। এরপর থেকেই ইসরায়েলে ওপর প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা একটি বড় ধরনের সংঘাতে রুপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে।
সূত্র: আলজাজিরা, আনাদোলু
(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/এমআর)