আখাউড়ায় সম্মেলন ঘিরে বিভক্ত বিএনপি, বাড়ছে কোন্দল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। দলের একটি বড় অংশকে সুযোগ না দিয়ে সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলের ঐক্যের স্বার্থে ঘোষিত সম্মেলন স্থগিত করে সবার অংশগ্রহণে সম্মেলন করার দাবি জানিয়েছেন বাদ পড়া নেতাকর্মীরা।
বিভক্ত দুটি অংশ হলো কবির আহমেদ ভুইয়ার নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আহ্বায়ক কমিটির একটি অংশ, আর অন্য পক্ষে সাবেক সংসদ সদস্য মুশফিকুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত একটি অংশ। দুজনই আগামী জাতীয় সংসদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। আগামী ৫ অক্টোবর আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন কৌশলে কসবা-আখাউড়া আসনের (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪) বিএনপির তিন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়। ওই নির্বাচনের পর থেকে কবির আহমেদ ভুইয়া আখাউড়া-কসবায় বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বরিশাল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অফিসে কর্মরত আব্দুর রহমান ভুইয়া সানির বড় ভাই। ছোট ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে তিনি জেলা কমিটিসহ কসবা-আখাউড়ার বিএনপিতে হস্তক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ আছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে আখাউড়া উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তৎকালীন কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে আগের কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বহু অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতাকর্মী স্থান পাননি। তখন থেকেই বিএনপিতে বিরোধ শুরু হয়। ওই কমিটি গঠনের জন্য কবির আহমেদ ভুইয়াকে দায়ী করেন কমিটিতে স্থান না পাওয়া নেতাকর্মীরা। উপজেলা বিএনপির একটি অংশ কবির আহমেদ ভুইয়ার নেতৃত্ব মেনে নিতে চায়নি। তারা পৃথকভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। অপরদিকে কবির আহমেদ ভুইয়ার নেতৃত্বে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ও অঙ্গসংগঠনগুলো দলীয় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দেশে পটপরিবর্তনের পর বিএনপির রাজনীতি চাঙা হয়ে ওঠে। সম্প্রতি আখাউড়া ও কসবা উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষে বিএনপির ওই নেতারা এলাকায় আসতে থাকেন। লন্ডন থেকে কবির আহমেদ ভুইয়া দেশে ফিরে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে আখাউড়ায় ত্রাণ বিতরণ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেন।
অপরদিকে সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানও দীর্ঘদিন পর কানাডা থেকে দেশে ফিরে নিজ নির্বাচনি এলাকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ বিতরণ ও নেতাকর্মীদের সাথে সভা-সমাবেশ করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর মুশফিকুর রহমান আখাউড়ায় এলে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই সাবেক এমপির আখাউড়ায় আগমন তার অনুসারীদের সাথে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বিরোধে নতুন করে ঘি ঢেলে দেয়।
এ ছাড়া ত্রাণ সহায়তা দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন, কৃষক নেতা নাসির উদ্দিন হাজারী।
মুশফিকুর রহমান আখাউড়া থেকে ফিরে যাওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় উপজেলা বিএনপি সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে। ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন আব্দু ও সদস্য সচিব খোরশেদ আলম ভুইয়ার যৌথ স্বাক্ষরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, এই মুহূর্তে দলের ঐক্য দরকার। বিগত ১৫-১৬ বছর নেতাকর্মীরা অনেক হামলা-মামলা, জেল-জলুমের শিকার হয়েছেন। দলে বিভক্তি থাকলে সামনে দলকে আরও বড় খেসারত দিতে হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিএনপির জন্য যে সুযোগ এসেছে তা কাজে লাগাতে হবে।
আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর মিশন বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এ অবৈধ কাউন্সিল সম্পর্কে অবগত নয়। সাবেক কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বহু নেতাকে কাউন্সিলর করা হয়নি। এই কাউন্সিল স্থগিত করে সবার মতামতের ভিত্তিতে সম্মেলন করার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলম ভুইয়া বলেন, বিগত ১৫ বছর যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে চলেছে, দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি, তারা এখন ভিন্ন কথা বলছেন। তাদের পদ-পদবিতে রাখার সুযোগ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘কবির আহমেদ ভুইয়া দুর্দিনে বিএনপির হাল ধরেছেন। তার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’(ঢাকাটাইমস/২অক্টোবর/মোআ)

মন্তব্য করুন