রাঙ্গুনিয়া ইউনিটেক্স জুটমিল
পাট ও নগদ টাকার সংকটে কমেছে উৎপাদন, বিদায় ৫০০ শ্রমিকের

বেসরকারি খাতে ইউনিটেক্স গ্রুপের কাছে লিজ দেয়ার পর উৎপাদনে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী জুট মিল। তিন শিফটে কর্মসংস্থান হয়েছিল প্রায় ৮০০ শ্রমিকের। উৎপাদন হতো দৈনিক ১৮-৩০ টন সুতা। উৎপাদিত সুতা রপ্তানি হতো বিশ্বের ১২টি দেশে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার কারণে পাটের ঘাটতি আর ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনে সমস্যার কারণে ধস নেমেছে উৎপাদনে। ইতিমধ্যে মিল থেকে বিদায় নিয়েছেন ৫০০ শ্রমিক।
এদিকে অনেকে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার গুজব তুলছে। তবে ইতিমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়া মিল বন্ধ হওয়ার বিষয়টি গুজব বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিগগিরই মিলটি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করেন তারা।
জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী জুট মিলস ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে লিজ পায় ইউনিটেক্স গ্রুপ। ৪৭ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত পেপার মিলটি ইউনিটেক্স গ্রুপ লিজ পাওয়ার পর তিন শিফটে দৈনিক ১৮-৩০ টনের বেশি সুতা উৎপাদন হয়। এসব সুতা চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুর্কি, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি হতো। পর্যায়ক্রমে কার্পেট, জুট ব্যাগসহ আরও বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল বেসরকারি খাতে পরিচালিত এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি।
হঠাৎ করেই সরকারের পটপরিবর্তনের পর তাদের এই মিলে স্থবিরতা নেমে আসে। বর্তমানে মিলটির উৎপাদনে ধস নামে এবং মিলের পাঁচ শতাধিক শ্রমিক মিল ছেড়ে চলে যান। এমনকি যাওয়ার আগে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভও করেন তারা। পরে রাঙ্গুনিয়ায় কর্মরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে তাদের শান্ত করেন। একপর্যায়ে বেতন উত্তোলন করে মিল ছেড়ে চলে যান তারা।
সরেজমিনে জানা যায়, ব্যাংক থেকে টাকা না দেয়ায় পাট কেনা যাচ্ছে না। তার ওপর বন্যার কারণে পাটের সংকট রয়েছে। এতে উৎপাদন কমে এসেছে মিলটিতে। বর্তমানে কোনোরকম এক শিফট চালু রয়েছে। যেখানে স্থানীয় ৭০-৮০ জন শ্রমিক দৈনিক কর্মরত রয়েছে।
এক মাস আগেও উৎপাদনের জন্য যেখানে মিলের স্পিনিং মেশিং চলত ২২টা, সেখানে চলছে মাত্র ৬টি। ড্রয়িং মেশিন ১৮টির মধ্যে চলে ৩টি। বেচিং মেশিন চলে ৩টা, ফাইভেনার চলছে ৫টি। মিলে আগের কেনা ১২০ টন মতো পাট মজুদ আছে। এসব দিয়ে এভাবে আগামী এক মাস মিল চালু রাখা যাবে।
অন্যদিকে বর্তমানে উৎপাদিত সুতা রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এমনকি আগের অর্ডারও সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রেতারা বাতিল করে দিচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে কিছু সংখ্যক উৎপাদিত সুতা সরবরাহ করে সচল রয়েছে মিলটি।
নাজমা আক্তার নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, “তিন বছর ধরে মিলে কর্মরত আছি। আমরা সব মিলিয়ে ৭০-৮০ জনের মতো শ্রমিক রয়েছি। দৈনিক এক শিফট উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন সবাই কাজ পায় না। আমি গত সপ্তাহ কাজ পেয়েছি মাত্র ৩ দিন, এই সপ্তাহে ২দিন। দিনে ২৮০ টাকা করে পাঁচ দিনের টাকা দিয়ে নিজে চলব, নাকি সংসার চালাব। মিলে কর্মরত সব শ্রমিকই এই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছেন।’
ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের থেকে সরাসরি পাট সংগ্রহ করি। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যার কারণে কৃষকদের থেকে পাট কেনা যাচ্ছে না। তার উপর ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে না পারায় নগদ টাকার অভাবও রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৮ জুলাই ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে শ্রমিক আনিয়েছিলাম, তাদের দেড় মাস বসিয়ে খাওয়ালাম। মিলের এই দুরবস্থার মধ্যে যাওয়ার আগে তাদের দুই মাসের বেতনও দিছি। এভাবে ক্রমাগত লোকসান দিয়ে হলেও মিল চালু রেখেছি।’
মিল বন্ধের বিষয়টি গুজব বলে দাবি করে সহকারী পরিচালক বলেন, ‘১০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ হয়েছে এই মিলে। তাই মিল বন্ধের কোনো সম্ভাবনা নেই। শিগগিরই এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে বলে আশা করি। এই লক্ষে আমরা কাজ করছি।’
(ঢাকাটাইমস/৪অক্টোবর/মোআ)

মন্তব্য করুন