ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে সাতক্ষীরায় বৃষ্টি শুরু, ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ নিয়ে উপকূলে উৎকণ্ঠা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:০৪
অ- অ+

ঘূর্ণিঝড় রেমালসহ পূর্ববর্তী একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলীয় এলাকার মানুষ। রেমাল আঘাতের পাঁচ মাস না যেতেই ফের বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার আকাশ মেঘলা রয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় ডানা আঘাত হানলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নদ-নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভেঙে যেতে পারে দুর্বল বেড়িবাঁধ। এজন্য উপকূলের বিভিন্ন এলাকার জরজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তিত সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা মানুষ।

সিডর-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বশান্ত হওয়া এ অঞ্চলের মানুষ বহু কষ্টে ঘুরে দাঁড়ানোর পর আবারও এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত লবনপানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছে। এখনই ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে মানুষ আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, আজ বুধবার এই গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘দানা’। উপকূলীয় অঞ্চলে ২ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। এর প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় আকাশ মেঘলা ও বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি বাড়তে পারে সন্ধ্যার পর থেকে। তিনি বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারও বৃষ্টি হতে পারে।

শ্যামনগর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. শাহিনুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ মোকাবিলায় উপজেলার সরকারি ১০২টিসহ মোট ১৬২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছ। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। জানমালের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ২ হাজার ৯৮০ জন সিপিপি সদস্য, যার মধ্যে অর্ধেক নারী ও অর্ধেক পুরুষ। এছাড়া পর্যাপ্ত অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগের আওতাধীন জেলায় ৬৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি পয়েন্টের সাড়ে ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, তার বিভাগের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি পয়েন্টে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। আপদকালীন কাজের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া গোটা গাবুরা ইউনিয়নে প্রায় ২৯ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য মেগা প্রকল্পের আওতায় ৪৮টি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দনের ২৬ নং প্যাকেজের কাজ করার জন্য অদ্যবধি কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আপাতত নদী ভাঙনের তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও অতিরিক্ত জোয়ারের পানি যেন ছাপিয়ে বাঁধের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য একাধিক টিম কাজ করছে। যেসব জায়গাতে বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক সেখানেও সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়া আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ, জিও ফিল্টার, জি পলেস্টার মজুদ করে রেখেছি। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে তৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, তার বিভাগের আওতাধীন প্রায় সাতক্ষীরা জেলায় ৩০৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পোল্ডারের তিনটি পয়েন্টে ২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। সট টেন্ডারের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে।

এছাড়া আগাম প্রস্তুতি হিসাবে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যাক জিও ব্যাগ, ফিল্টার ও জি পলেস্টার মজুদ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগাত বার্তা পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের উপর নজর রাখা হয়েছে। আমাদের লোকজন তাদের স্ব স্ব এলাকায় কাজ করছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন।

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর, এরপর ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালে ২৬ মে ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে অশনি এবং ২০২৩ সালের ১৪ মে ‘মোখা’ আঘাত হানে।

সর্বশেষ সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এটি ২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করে। এ সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় খুলনার কয়রা, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। যার ক্ষত শুকায়নি এখনো।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রতারক সিকদার লিটন একদিনের রিমান্ডে
প্লট দুর্নীতি: শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে তামিল প্রতিবেদন ১৮ মে
শার্শায় ১০ স্বর্ণের বারসহ পাচারকারী আটক
মুজিবনগর সীমান্তে ১০ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন বিএসএফের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা