কোন কোন ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপজ্জনক
প্রাণঘাতী রোগ ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। মানুষ যখন খাবার গ্রহণ করে, তখন শরীরের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো যে খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটির অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকেই বলা হয় ডায়াবেটিস। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো ডায়াবেটিস রোগের মূল কথা। টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। টাইপ-২ রোগীর শরীরে যে ইনসুলিন উত্পন্ন হয়, একে ব্যবহার করতে পারে না। চিকিত্সকদের পরামর্শ হচ্ছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে জীবনধারায় আগে থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে।
সুষম ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন হ্রাস ইত্যাদির মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়। খাদ্যাভ্যাসে ফল থাকার গুরুত্ব সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন গবেষকেরা।
ফলে রয়েছে ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ফাইবারেরে মতো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নানা উপাদান। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে পেটের যত্ন নেওয়া— সবেতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফল। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ফল খাওয়াতেও সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে সব ফল খাওয়া যায় না। কারণ, ফলে ফ্রুক্টোজের পরিমাণ কম নয়। যা শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
যে সব খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জি.আই) উপরের দিকে, ডায়াবেটিস হলে সে সব খেতে বারণ করেন চিকিৎসকরা। কিছু ফলের জি.আই অনেক বেশি। তাই ডায়াবেটিস থাকলে সেই ফলগুলো একেবারে খাওয়া যাবে না। কয়েকটি ফলে জি.আই কম। সেগুলি কিন্তু নির্দ্বিধায় খেতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীরা।
কিছু কিছু ফল আছে, যাতে রয়েছে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। যেগুলি খাওয়ার সময় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, কারণ শরীর গ্লুকোজ ভাঙতে লড়াই করে এবং টাইপ ১ এবং ২ ডায়াবেটিস হতে পারে।
অপরিবর্তিতদের জন্য, টাইপ ১ উদ্ভূত হয় যখন ইনসুলিন-উত্পাদক কোষ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, শরীর দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায় এবং টাইপ ২ প্রায়ই স্থূলতা বা অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) যুক্ত ফল ডায়াবেটিকদের এড়িয়ে চলা উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একটি রেটিং সিস্টেম, যা নির্দেশ করে যে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারগুলো একা খাওয়ার সময় আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে কত দ্রুত প্রভাবিত করে। বলা হয় যে উচ্চ জিআই খাবার খুব দ্রুত ভেঙ্গে যায় যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
ডায়াবেটিস থাকলে ফল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। ফল খাওয়ার পাশাপাশি কতটা পরিমাণে খাচ্ছেন, সেটাও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম বলে একসঙ্গে অনেক বেশি পরিমাণে খেয়ে নিলেও চলবে না।
চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস থাকলে প্রতিদিন ১০০-১৫০ গ্রাম ফলের বেশি খাওয়া ঠিক হবে না। জি.আই বেশি হোক বা না হোক, ফল খেলে কম করে খাওয়াই ভাল। কয়েকটি ফল রয়েছে, যেগুলো ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারেন। আবার কিছু ফল রয়েছে ডায়াবেটিকদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এমন কিছু ফল আছে যেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। জেনে নিন ডায়াবেটিস রোগীদের কোন কোন ফল এড়িয়ে চলা উচিত।
কিশমিশ
অনেকেই হাতের কাছে কিশমিশ পেলে কয়েকটি খেয়ে ফেলেন। ভীষণ মিষ্টি স্বাদের শুকনো এই ফলটি আঙ্গুরের আরেকটি রূপ। মায়ো ক্লিনিকের মতে এক কাপ পরিমাণ কিশমিশে রয়েছে প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ চিনি ও ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। বোঝাই যাচ্ছে, ডায়বেটিস রোগীদের কিশমিশ থেকে দূরে থাকা খুবই জরুরি।
আনারস
মিষ্টি-রসালো আনারস দেখলে কার না জিভে জল আসে! তবে আপনি হয়তো জানেন না, আনারসে চিনির পরিমাণ উচ্চ থাকে! ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত আনারস খেলে তা ব্লাড সুগার লেভেলের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আনারস বেশি না খাওয়াই ভাল।
কলা
কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। তবে কলাতে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে এবং কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফলটি খুব একটা উপকারি নয়। তবে মাঝেমধ্যে এক-আধটা কলা খাওয়া যেতেই পারে। কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে।
তরমুজ
তরমুজে ফাইবার এবং ক্যালোরি কম থাকে। এতে জিআই ভ্যালু হল ৭২ এবং হাফ কাপ তরমুজে প্রায় পাঁচ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। তাই তরমুজ ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি না খাওয়াই ভাল।
সবেদা
বাদামী রঙের ফল এবং দানাদার স্বাদ যুক্ত সবেদা প্রাকৃতিক মিষ্টিতে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম সবেদায় প্রায় ৭ গ্রাম শর্করা থাকতে পারে। এতে কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করাও উচ্চ পরিমাণে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে।
আম
আম ফলের রাজা আমকে চোখের সামনে দেখলে লোভ সামলানো মুশকিল। তবে মনে রাখতে হবে, আমেও কিন্তু চিনির পরিমাণ উচ্চ থাকে। ১০০ গ্রাম আমে প্রায় ১৪ গ্রাম চিনি থাকে, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্যকে আরও খারাপ করতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই ফল এড়িয়ে চলাই ভাল।
আঙুর
আঙুরে ফাইবার, ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থাকলেও, এতে শর্করার পরিমাণও বেশ ভালই থাকে। ৮৫ গ্রাম আঙুরে প্রায় ১৫ গ্রাম পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি এড়িয়ে চলাই ভাল।
ডায়াবেটিস দূরে রাখে যেসব ফল
প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। অনেক রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে আপেল। রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে আপেল। এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। বিভিন্ন কারণে তাই স্বাস্থ্যের উপকারে রোজকার তালিকায় আপেল রাখার পরামর্শ তাদের।
বাজারে এখন সব সময় কমলালেবু পাওয়া যায়। রোজ কমলালেবু খেলে যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তেমনই ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে কমলালেবু।
অনেকেই ব্রেকফাস্টে বেরি খেয়ে থাকেন। ওটস কিংবা কর্ন ফ্লেকসের সঙ্গে নিয়মিত বেরি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এছাড়াও নিয়মিত বেরি খেলে ঘুমও ভালো হয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের একটি বড় সমস্যা হল কোষ্ঠকাঠিন্য। পেয়ারার মধ্যে প্রচুর ফাইবার থাকে। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কম করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রোগীকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করে।
পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। রক্তে গ্রুকোজের মাত্র বেড়ে গেলে রোগীর হার্ট, নার্ভের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নিয়মিত পেঁপে খেলে তা কিছুটা রুখে দেওয়া যায়।
ডায়াবেটিসে জাম বিশেষ উপকারী। জামের মধ্যে থাকা একটি বিশেষ উপাদান খাবারের স্টার্চকে ভেঙে দেয়। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে। সুগার রোগীদের ঘনঘন প্রস্রাব ও তৃষ্ণার প্রবণতা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
(ঢাকাটাইমস/০৪ নভেম্বর/আরজেড)
মন্তব্য করুন