মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনকেই সংস্কার মনে করে বিএনপি: তারেক রহমান
মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনকেই বিএনপি প্রকৃত সংস্কার বলে মনে করে বলে জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সংবিধানের মধ্যে কতকগুলো লাইনের পরিবর্তনই সংস্কার নয়। সংস্কার বলতে, যা করলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে সেটা।
মঙ্গলবার বিকালে যশোর টাউন হল মাঠে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক স্মরণসভায় ‘ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
‘অনেকেই অনেক রকম সংস্কারের কথা বলছেন’-এ কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের সকলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রশ্নেরচ্ছলে বলেন, সংবিধানের মধ্যে কতকগুলো লাইনের পরিবর্তনই কি সংস্কার?
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সংস্কার বলতে আমরা সেই সংস্কারই বুঝি, যে সংস্কার করলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, যে সংস্কার করলে বেকারদের কর্মসংস্থান, নারীদের স্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং দেশের সন্তানেরা সুশিক্ষা পাবে ও মানুষ ন্যুনতম চিকিৎসা নিতে পারবে।’
তারেক রহমান জানান, দেশে ও দেশের মানুষের ভাগ্যের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সংস্কারের কথা যদি কেউ বলে থাকে, তা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিই বলেছে।
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধান মন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘২০৩০ ভিশন’ নামে সংস্কারের কথা বলেছেন। ২০২৩ সালে দলের পক্ষ থেকে, এবং এর কয়েকদিন পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে থাকা সকল দলকে একত্রিত করে সংস্কারের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি।’
সংবিধান পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সংবিধানে অবশ্যই কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। দিন-দুনিয়ার পরিবর্তিত সময়ের প্রেক্ষাপটে কিছু সংস্কার করতে হবে। সেই সংস্কারগুলো যাতে সফল সংস্কার হয় সে জন্য কী কী করা উচিৎ তা সকল দলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে হওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনাসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তাদের দোসর-প্রেতাত্মারা এখনো সর্বত্র বসে আছে বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, গণঅভ্যুত্থানে বাধ্য হয়ে স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। স্বৈরাচারের মাথা পালিয়েছে, কিন্তু তার প্রেতাত্মারা সমাজে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এখনও রয়ে গেছে। এ সব স্থানে থেকে তারা তাদের ষড়যন্ত্রের বীজ বপনের চেষ্টা করছে।
২৩ মিনিটের বক্তৃতায় তারেক রহমান ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী কঠিন সময়ে পিজি হাসপাতালে মরহুম তরিকুল ইসলামের সঙ্গে এক মিনিটের কথোপকথোনের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যে তিনি (তরিকুল ইসলাম) শুধু একটি কথা বলেছিলেন, ‘তারেক, নিজেকে শক্ত রাখো, ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। সেদিন উনার এই একটি কথা আমাকে অনেক সাহস জুগিয়েছিল।’
মরহুম তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা দিয়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে তার মতো একজন রাজনীতিকের অভাব বোধ করছে দেশে ও দেশের মানুষ।
যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সভাপতিত্বে এ স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপি’=র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইউব, আবুল হোসেন আজাদ ও সাবিরা নাজমুল মুন্নী এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বক্তৃতা করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও মরহুম তরিকুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্র অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও মরহুম তরিকুল ইসলামে সহধর্মীনী অধ্যাপক নার্গিস ইসলাম ইসলামসহ যশোর জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
যশোর জেলার প্রতিটি উপজেলাসহ আশে-পাশের জেলা থেকে আসা হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভীড়ে এই স্মরণসভা রূপ নেয় বিশাল এক জন-সমাবেশে। স্মরণসভা শুরুর নির্ধারিত সময় বিকেল তিনটার আগেই টাউন হল মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে মানুষের ঢল জনসভাস্থল পেরিয়ে আশপাশের রাস্তা ও অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে।
ঢাকাটাইমস/০৫নভেম্বর/ইএস
মন্তব্য করুন