মামলার বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বললেন, ‘জানি না’, ওসি বললেন তদন্ত চলছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর রামপুরায় সোহান শাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামির তালিকায় নাম রয়েছে ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামের এক ব্যক্তির। নামটি আংশিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য উপদেষ্টা হওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে মেলে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর উপদেষ্টা পরিষদ থেকে তার অপসারণের দাবি জানাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
তবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলছেন, মামলায় নাম থাকা ব্যক্তিটি তিনি কিনা সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ বলছে, মামলায় নাম থাকা শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়াকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানিয়েছেন, ওই মামলায় থাকা ৪৮ নম্বর আসামি শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনিই বর্তমান বাণিজ্য উপদেষ্টা কি-না জানতে তদন্ত চলছে।
গত ১৯ জুলাই রামপুরা সিএনজি স্টেশনের সামনে সোহান শাহ গুলিবিদ্ধ হন। একমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৪ আগস্ট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার মা সুফিয়া বেগম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে সেই মামলা রামপুরা থানায় রেকর্ড করা হয়। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এই মামলায় ৪৮ নম্বর আসামির তালিকায় আছেন- যশোরের সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিন ভূঁইয়া এবং ৪৯ নম্বর আসামির তালিকায় আছেন শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া। তাদের দুইজনের বাবার নাম ও বাসার ঠিকানা একই দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সেখ বশির উদ্দিন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মামলার বিষয়টি সামনে আসে। বলা হচ্ছে, আকিজ গ্রুপের এই কর্তা ব্যক্তিরাই হলেন সোহান শাহ হত্যা মামলার আসামি।
রবিবার অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা শপথ নেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সেখ বশির উদ্দিন। এদিন শপথ অনুষ্ঠান চলাচলে উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবন এলাকায় জড়ো হয়ে আন্দোলন করতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসক্লাবে একই দাবিতে আন্দোলন হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ২৪-এর আন্দোলনের সঙ্গে যারা ছিল না তারা সরকারে থাকতে পারবে না। এই সরকারে আওয়ামী লীগের কোনো দোসর থাকতে পারবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন শপথ নেওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।’
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ ঢাকা টাইমসকে বলেন, সোহান হত্যা মামলাটি হয়েছিল আদালতে, এরপর আমরা নথিভুক্ত করেছি। সেখানে শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া নামে এক আসামি রয়েছে। এই নামের সঙ্গে উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের নাম, তার বাবার নাম ও বাসার ঠিকানার আংশিক মিল রয়েছে। তবে আসামি যে ব্যক্তিকে করা হয়েছে তার পূর্ণ নাম শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া। ‘ভূঁইয়া’ অংশটি নিয়ে আমাদের সংশয় রয়েছে, আসলে দুইজন একই ব্যক্তি কি-না। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
থানা সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে অনেক শিল্পগোষ্ঠী অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছিল। তাদের মধ্যে আকিজ গ্রুপও রয়েছে। মামলায় বশির উদ্দিন ভূঁইয়ার ভাই যশোরের সাবেক এমপি আফিল উদ্দিনের নাম আছে। এই আফিল আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। একারণেই সোহান শাহ হত্যা মামলায় নাম এসেছে শেখ বশির উদ্দিন ও আফিল উদ্দিনের। মামলায় তাদের সংশ্লিষ্টতা আসলে আর্থিক কারণে। এখন মামলাটি তদন্ত সময় সাপেক্ষ্য ব্যাপার। তারপরই প্রমাণ হবে উপদেষ্টার নামই ওই এজাহারে রয়েছে কি না।
এদিকে অপসারণ দাবিতে আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার সকালে প্রথম কর্মদিবসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্র আন্দোলনের চেতনার সঙ্গেই ছিলাম। সামনে বাজারে স্বস্তি ফেরাতে কাজ করব। মানুষের কষ্ট আমি বুঝি। নতুন উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে ব্যবসায়ী হিসেবে আমার সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নামের আংশিক সংগতি ও অসংগতি রয়েছে। আমি নিশ্চিত না মামলাটি আমার নামে হয়েছে কি না। আমার নামে হয়ে থাকলে আইনগতভাবে মোকাবিলা করব।’
ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/এসএস/ইএস
মন্তব্য করুন