বিশ্ব হাঁটা দিবস: সহজ এই ব্যায়ামের রয়েছে ৮ বিস্ময়কর উপকারিতা
শরীরচর্চার সবচেয়ে সহজ উপায়টি হলো হাঁটাহাঁটি করা। আমরা সবাই কমবেশি হাঁটি। কারণে-অকারণে হাঁটি। কিছু মানুষ আছেন, যারা নিয়ম করে প্রতিদিনই হাঁটেন। হাঁটা নিয়ে এত কথা বলার কারণ, আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব হাঁটা দিবস। তাই কেন প্রতিদিন হাঁটবেন, তাতে লাভ কী- এসব নিয়ে দুই-চার কথা না বললেই নয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁটার অনেক উপকারিতা আছে। এর ফলে পেশী সুগঠিত হয়, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুরক্ষিত থাকে ও মেরামত হয়, হজমে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককেও সতেজ রেখে বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। হাঁটার ফলে মানুষের চিন্তার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়, মেজাজ বা মুড ভালো থাকে, মানসিক চাপ কমে।
চলুন তবে আর দেরি না করে নিয়মিত হাঁটার ৮টি বিস্ময়কর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।
মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে
নিষ্ক্রিয় থাকার অর্থ শরীরে পেশীর শক্তি কমে যাওয়া। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা এর ফলে মস্তিষ্কও শুকিয়ে মরে যেতে শুরু করে। আমরা যখন হাঁটি তখন পেশীতে তৈরি হওয়া মলিকিউল বা অণু আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে। তার মধ্যে একটি বিশেষ অণু মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের ব্রেনের কোষগুলো বিকশিত হয়। ফলে হাঁটলে মস্তিষ্ক আরও শক্তিশালী হয়।
হার্ট ভালো থাকে
হৃৎপিণ্ড ভালো থাকার জন্য হাঁটা খুবই উপকারী। আমাদের পূর্ব-পুরুষরা, যারা শিকার করে জীবন ধারণ করতেন, তারা দিনে ১৫ থেকে ১৭ মাইল হাঁটতেন। দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে সিমানে নামের একটি গোত্র আছে, যাদের ৮০ বছর বয়সী ব্যক্তির হার্ট ৫০ বছর বয়সী একজন মানুষের হার্টের মতো কাজ করে। এর কারণ হলো তারা সারাদিন প্রচুর হাঁটেন।
হজমে সাহায্য করে
হাঁটা মানুষের পরিপাকতন্ত্রের জন্যেও বন্ধুর মতো কাজ করে। মানুষ যখন অনেক হাঁটা-চলা করে তখন তার খাবারও বেশি হজম হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য কাটাতে ওষুধ না খেয়ে আপনি যদি হাঁটতে বের হন, সেটা অনেক ভালো। এর সাহায্যে আপনি খুব সহজেই হজমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে
হাঁটা যে আমাদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এর ফলে অনেক সমস্যা সমাধান করাও সহজ হয়। আপনি যখন কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছেন তখন হতাশ হয়ে এক জায়গায় বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করলে সেটা সমস্যা সমাধানে অনেক সহায়ক হয়।
অনেক বড় বড় লেখক, দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি যে, হাঁটতে হাঁটতে তারা কীভাবে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলে যায় ঔপন্যাসিক স্টিফেন কিং এর কথা। তিনি নিয়মিত হাঁটতে বের হন এবং প্রচুর হাঁটেন।
দার্শনিক ও লেখক বার্ট্রান্ড রাসেলও যখন হাঁটতে বের হতেন তখন ছোট্ট একটি কাগজে তার অনেক চিন্তাভাবনা টুকে রাখতেন। পরে তিনি এসব ব্যবহার করে দুর্দান্ত সব গদ্য রচনা করেছেন।
বিষণ্ণতা কাটাতে সাহায্য করে
স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মতে, বিষণ্ণতার সঙ্গে বসে থাকার সম্পর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বেলাতে বিষণ্ণতা দেখা যায় বেশি। অন্যভাবে বললে সহজ করে বলা যায়, যতই সক্রিয় থাকা যায় ততই ভালো।
রক্ত প্রবাহের সমস্যা থেকেও বিষণ্ণতা তৈরি হয় বলে ধারণা রয়েছে। আপনি যদি প্রচুর হাঁটেন, রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে সেগুলো কমে যায়। সেটা নাটকীয়ভাবেই হ্রাস পায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি করা এক ধরনের ভ্যাকসিন বা টীকার মতো কাজ করে। সাহায্য করে বিষণ্ণতা কমাতে।
আরও বেশি খোলা মনের ও বহির্মুখী হতে সাহায্য করে
এবিষয়ে একটি তত্ত্বে বলা হয় যে, আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিত্বে কতগুলো বিষয় আছে এবং সক্রিয় থাকার সঙ্গে এগুলোর সম্পর্ক আছে। যেমন অকপটতা, বিবেক দিয়ে পরিচালিত হওয়া, বহির্মুখী হওয়া, কোনো কিছুর ব্যাপারে সম্মত হওয়া ইত্যাদি।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, যারা নিষ্ক্রিয় থাকে তারা কম খোলা মনের হয়, কম বহির্মুখী হয় এবং তাদের স্নায়ু-জনিত অনেক সমস্যাও দেখা দেয়। উল্টো করে আপনি যদি সক্রিয় কোনো ব্যক্তিকে দেখেন তাহলে দেখবেন, তাদের মধ্যে এই বিষয়গুলো খুব বেশি কাজ করে না। খুব সহজেই তারা অসুখবিসুখেও আক্রান্ত হযন না।
বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে
আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি সেটা বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। হাঁটাহাঁটি করা এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, সারা দিন ধরে যদি অল্প মাত্রাতেও সক্রিয় থাকা যায় সেটা জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করার চাইতেও অনেক বেশি উপকারী।
অনেকে জিমে যাওয়াকে অনেক বড় করে দেখেন। সারা দিন শুয়ে বসে কাটিয়ে তারা মনে করেন ওই এক ঘণ্টায জিম করেই তারা সুস্থ থাকবেন। আসলে এ ধরনের ব্যায়াম মানুষকে নিষ্ক্রিয় থাকার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারে।
কারণ, শরীর তখন বলতে থাকে তুমি তো তোমার কাজটা করেই ফেলেছ, সুতরাং তুমি এখন বসে থাকতে পারো, খেতে পারো। তখন আসলে বিপাক প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে যায়।
শারীরিক গঠন অটুট রাখতে সাহায্য করে
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদেরকে সারাদিন চেয়ারে, সোফায় কিম্বা গাড়িতে বসে কাজ করতে হয়। এর ফলে শারীরিক গঠনে, বিশেষ করে পিঠে ব্যথা হতে পারে। মানুষের দেহ এমনভাবে তৈরি নয়, যা সারাদিন একটি অবস্থানে থাকতে পারে। এটা আপনার জন্য খুবই খারাপ। চেয়ার থেকে উঠে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা আপনাকে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
তাই বিশ্ব হাঁটা দিবসে প্রতিজ্ঞা করে ফেলুন যে, প্রতিদিনই নিয়ম করে হাঁটবেন। সকাল-বিকাল দুই বেলা হাঁটতে পারলে আরও ভালো। তাতে রাতে ঘুম হবে আরামের। কাজের ব্যস্ততায় সেটি না পারলে অন্তত একবেলা হাঁটুন। কম দূরত্বে যাওয়ার দরকার পড়লে হেঁটেই রওনা হন। তাতে ভালো থাকবে শরীর।
(ঢাকা টাইমস/১৪নভেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন