আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক সম্মান ভর্তি পরীক্ষা নেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: উপাচার্য আমানুল্লাহ

আবারো চালু হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। শিক্ষা এবং ডিগ্রির মান উন্নয়নে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অধিভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানে এই ভর্তি পরীক্ষা নেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
শনিবার দুপুরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা মহিলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ এ তথ্য জানান।
সমাবেশে শিবগঞ্জ উপজেলার ৬টি কলেজের ছাত্র-শিক্ষক এবং স্থানীয় সুধীজনরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে আগামী জানুয়ারি থেকে বগুড়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
ড. আমানুল্লাহ বলেন, `জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এক ধরনের সংস্কার আনতে যাচ্ছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আমরা এ ধারণাগুলো থেকে বের হওয়া চেষ্টা করছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সিলেবাস রয়েছে, সে সিলেবাস কারিকুলাম পরিবর্তন করতে যাচ্ছি।‘
`জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক যে টিম রয়েছে তাদের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করার চেষ্টা করছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষা বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছি। পেছনের যে সমস্ত পরীক্ষা রয়েছে সেগুলো যদি আমরা আগামী বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়ে নিতে পারি, তাহলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট ৮০ শতাংশ দূর করতে পারবো।‘
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এলোমেলো থাকা অবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেন উল্লেখ করে উপাচার্য আমানুল্লাহ বলেন, `এ অবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের ভেতরে আনার জন্য আমরা গত দুই মাসে আড়াই হাজার কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এবং সদস্য দিয়েছি। সারাদেশের কলেজগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ উচ্চ শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে।‘
উপাচার্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মান উন্নয়নে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংক উন্নয়নে সিলেবাস সংস্কারের রূপরেখা উল্লেখ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সম্মান শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি এবং অন্যান্ন সংক্ষিপ্ত টেকনিক্যাল কোর্সের প্রস্তাব করেন।
বলেন, `আগামীতে স্নাতক সম্মান কোর্সের সঙ্গে এ সমস্ত যেকোনো একটি টেকনিক্যাল কোর্সে বাধ্যতামূলক অধ্যয়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কলেজ পর্যায়ে টেকনিক্যাল কোর্স পাঠদানে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।‘
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতির হার বাড়ানো, অ্যাসাইনমেন্ট এবং ইনকোর্সগুলোকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং কলেজের লাইব্রেরিগুলোতে পর্যাপ্ত রেফারেন্স বইয়ের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণসহ দেশের সর্বস্তরের কলেজ সমূহের ভৌত অবকাঠামো উন্নতিকল্পে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যত রূপরেখা তুলে ধরেন।
এসময় উপাচার্য জানান, জুলাই আন্দোলনে নিহত শহীদ পরিবারকে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন লাখ টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
উপাচার্য বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানে শহীদ বীর আবু সাঈদ এবং বীর মুগ্ধর নামে ভবন এবং নতুন স্থাপনার নামকরণ করা হবে। বগুড়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন আঞ্চলিক কেন্দ্র নির্মাণেরও ঘোষণা দেন উপাচার্য।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা তাহমিনা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, নঁওগা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাছানাত আলী এবং বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মূসা, পিপিএম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপাচার্য এএসএম আমানুল্লাহ্। এরপর শান্তির পায়রা অবমুক্ত করে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/ডিএম)

মন্তব্য করুন