প্রতিবেশী প্রভুরাষ্ট্র নয়, বন্ধুরাষ্ট্র চাই: জামায়াত আমির
প্রতিবেশী প্রভু রাষ্ট্র নয়, বন্ধুরাষ্ট্র চান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কোনো আগ্রাসী হাত তারা দেখতে চান না। জাতীয় ইস্যুতে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রয়োজন।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। স্থানীয় ইস্টার্ণ জুট মিলস শ্রমিক ময়দানে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, এ দেশ কারও একার নয়, দেশ সবার। কিন্তু বিগত পনের বছরে একটি দল দেশকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। পনের বছরের জঞ্জাল সরিয়ে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
মর্যাদাশীল দেশ গড়ার কাজে সবাইকে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন জামায়াতের আমির। বলেন, ‘পরনির্ভরশীল নয়, কৃষি ও শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে দেশ গড়া প্রয়োজন। প্রভু নয়, বন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র চাই। কোনো আগ্রাসী হাত আমরা দেখতে চাই না।’
আমিরে জামায়াত অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের দুটি দেশপ্রেমিক সংস্থাকে ধ্বংস করে। প্রথমেই তারা বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এরপর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে ও কারাগারে রেখে তিলে তিলে হত্যা করে।‘ কিন্তু তাদের সে অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব এদেশের শান্তিকামী ছাত্র-জনতা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশকে অস্থিতিশীল করতে উস্কানি দিচ্ছে বলে সতর্ক করেন জামায়াতের আমির। তবে সেই ফাঁদে কোনোভাবেই পা না দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যতই ষড়যন্ত্র হোক তা ব্যর্থ করতে হবে। দেশ এখনো জঞ্জাল ও স্বৈরাচারমুক্ত হয়নি। তাই জাতীয় প্রয়োজনে ও জাতীয় ইস্যুতে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রয়োজন।’
পতিত শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশকে কারাগার বানিয়েছিল। তাদের মতের ন্যূনতম বাইরে গেলে সাধারণ জনগণকে খুন, গুম, নির্যাতন ও জেল জুলুম দেয়া হতো। দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে এদেশের ছাত্র-জনতা ন্যায়বিচারের স্লোগান নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। তাদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়া এখন আমাদের দায়িত্ব।’ সে লক্ষ্য নিয়েই জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে কাজ করার তাগিদ দেন দলের শীর্ষ নেতা।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, এ অঞ্চলের প্রধান দুটি সমস্যা হলো মিল ও বিল। আওয়ামী লীগ আমলে ওই দুটিই ধংস হয়েছে। একদিকে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে শ্রমিকদের বেকার করা হয়েছে অপরদিকে বিল ডাকাতিয়াসহ বিভিন্ন জলাশয় দখল ও স্লুইচ গেট বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে পানিবন্দি করে রাখা হয়েছে। প্রশাসনের দুর্নীতির কারনে মিলগুলো লোকসান হলেও তার দায়ভার চাপানো হয়েছে শ্রমিকদের ওপর।
ডুমুরিয়া-ফুলতলা সন্ত্রাস কবলিত এলাকা ছিল উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, পাঁচ বছরের জন্য তাকে এমপি নির্বাচিত করার পর সাধ্য অনুযায়ী সন্ত্রাসমুক্ত করা হয়েছে। আবার জনগণ তার ওপর দায়িত্ব দিলে প্রধান সমস্যাগুলোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে অঙ্গীকার করেন তিনি।
খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটোর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুনের পরিচালনায় সম্মেলনে আরেক বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।
কর্মী সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য মাষ্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হোসাইন, খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, নড়াইল জেলা আমীর এড. আতাউর রহমান বাচ্চু, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা গোলাম সরোয়ার ও অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান।
এ ছাড়া আরও ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এড. আবু ইউসুফ মোল্লা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইন, দিঘলিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা আবুল হাসান, অভয়নগর উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা মহিউল ইসলাম, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ আমিনুল ইসলাম, শেখ সিরাজুল ইসলাম, খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ, ফুলতলা উপজেলা আমীর আব্দুল আলিম মোল্লা, আব্দুল্লাহ আল ইমরান, শিরমনি আমীর মাওলানা এমদাদুল্লাহ মাশরুর, গিলাতলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা গোলাম মোস্তফা, মশিয়ালী আমীর মোঃ জাকারিয়া শেখ, হাফেজ আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১ডিসেম্বর/মোআ
মন্তব্য করুন