নতুন বাংলাদেশে কেমন পবিপ্রবি চান শিক্ষার্থীরা? 

সফিকুল ইসলাম, পবিপ্রবি
  প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩৫
অ- অ+

জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে প্রাণ পায় দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)। দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এখানেও অবসান ঘটে ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগীদের। নতুন উপাচার্য হয়ে আসেন বিশ্ববরেণ্য গবেষক শিক্ষক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক . কাজী রফিকুল ইসলাম। তার যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজ গতিশীলতায় সন্তুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নুতন উপাচার্যের কাছে প্রত্যাশাও একটু বেশি ৮টি অনুষদে চার হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর। কী আছে তাদের প্রত্যাশায়? বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীদের কাছে সেটিই জানার চেষ্টা করেছেন ঢাকাটাইমসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম।

মাদক র‌্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাসের দৃষ্টান্ত হোক পবিপ্রবি

-ফরিদুল ইসলাম, খাদ্য পুষ্টিবিজ্ঞান অনুষদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রায় ১৪০০ শত মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা ফিরে পেয়েছি নতুন স্বাধীনতা। নতুনভাবে তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে প্রত্যাশার পরিমাণ অনেক বেশি। মাননীয় উপাচার্য যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের বেশ কিছু চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন, যা প্রশংসনীয়। আমরা এমন একটা ক্যাম্পাস চাই যা হবে সুস্থ মাদকমুক্ত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অসুস্থ সংস্কৃতি হচ্ছে র‌্যাগিং। এই অপসংস্কৃতিসহ ছাত্র হয়রানি বন্ধের অনুরোধ জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন, ডাইনিংয়ের ভালো মান নিশ্চিত করতে হবে। পবিপ্রবির দুঃখ সৃজনী থেকে এম কেরামত আলী হলের রাস্তা। বিভিন্ন সময়ে রাস্তা পুনর্নির্মাণের আন্দোলন হলেও দীর্ঘদিনে কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি। বিগত সরকারের আমলে গঠিত সব নির্যাতন দুর্নীতিতে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

সংস্কার হোক বিগত ১৬ বছরের ক্ষত

-নূরনবী সোহান, আইন ভূমি প্রশাসন অনুষদ

আমার ভাইদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিজয় পেয়েছি আমরা। বিগত ১৬ বছরের সব অনিয়ম-দুর্নীতি ভঙ্গুর কাঠামোর সংস্কার চাই। যেকোনো ধরনের দুর্নীতি যাতে ক্যাম্পাসে প্রশ্রয় না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে পবিপ্রবি প্রশাসনের। অনুষদ কেন্দ্রিক বৈষম্যের শিকার পবিপ্রবির কিছু অনুষদ। বিশেষ করে আইন ভূমি প্রশাসন অনুষদের নিজস্ব কোনো ভবন নেই। সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও এই অনুষদ অনেক পিছিয়ে। এই দিকগুলো প্রশাসনকে গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য অনুরোধ থাকবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের সাথে সবসময় শোভন আচরণ করবেন এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন। প্রায় সময়েই পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়া একটা ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে এবং বিভিন্ন কারণে সেশনজটের মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এ থেকে মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে যাতে একজন শিক্ষার্থীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

ক্ষমতার অপব্যবহার রুখতে হবে, দূর করতে হবে সব সীমাবদ্ধতা

-সুমাইয়া আমিন, অ্যানিমেল সায়েন্স ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ

পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সু্যোগ পাওয়া নিঃসন্দেহে অনেক সম্মান মর্যাদাপূর্ণ। কিন্তু এখানে পড়তে আসা আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীকে হতাশ করে এখানকার সীমাবদ্ধতা। একটি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে সমৃদ্ধ করে এবং তাদের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়তা করে।

পবিপ্রবিতে বিভিন্ন কাঠামো নামমাত্র পরিচালিত হয় এবং সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। লাইব্রেরি থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত বইয়ের অভাব। লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা পড়ার আগ্রহ পায়। প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান অর্জনের জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি সুবিধা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শুধু খাতায় লিখে তা মুখস্থ করে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার পাস করা কাজের কথা নয়। পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের ব্যবস্থা ও সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কার দরকার খেলাধুলার মাঠ, জিমনেশিয়াম এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক ব্যবস্থার।

বরিশাল ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য পরামর্শ পাওয়া দুষ্কর। বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এগুলো কার‌্যকর করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, ইন্টার্নশিপ এবং চাকরির সুযোগ সম্পর্কে তথ্য প্রদান বিষয়ক সংস্থাগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে। পর্যাপ্ত সু্যোগের অভাবে কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া গুলোতে স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী মূল্যের খাবারের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। পরিবহন শাখায় পর্যাপ্ত বাস দরকার। শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে ঝুলে যাচ্ছে বরিশাল পটুয়াখালী। এসব সমস্যা খতিয়ে দেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যার সমাধান করা গেলেই শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বপ্ন পূরণেরও সিঁড়ি হয়ে উঠবে।

প্রশাসনের জবাবদিহি গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে

-আনাছ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভাবনার বিকাশ ঘটানোর জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে; কেননা অপসংস্কৃতির বাজে চর্চার মধ্য দিয়ে শত শত পিতা-মাতার স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। বুলিং, নেশা, বেহায়াপনা বিভিন্ন ধর্মপরিপন্থী কাজ বন্ধের জোর দাবি জানাই। পবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটাই দাবি- জবাবদিহিমূলক একটি প্রশাসন আমাদের দিন। পাঠদানের ন্যূনতম কাজটিতে শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পাঠদান শিক্ষকের প্রথম কাজ, দ্বিতীয় কাজ গবেষণা। তাই শিক্ষকের আগ্রহ সামর্থ্য অনুযায়ী ক্লাস কোর্স বণ্টনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে এবং তাদের স্বীকৃতি প্রমোশন সেই আলোকে হতে পারে। গবেষণার জন্য সরকার থেকে যথেষ্ট বরাদ্দ দিতে হবে। গবেষণার অনুদান প্রাপ্তিতে দলগত পরিচয়ের প্রাধান্য বন্ধ করতে হবে। বিদেশে গবেষণার নামে ভ্রমণ বন্ধ করতে হবে। গবেষণা পেপারের সংখ্যা না বাড়িয়ে গবেষণার মান বাড়ানো উচিত। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফান্ডসমেত সার্বক্ষণিক পিএইচডি-এমফিল ডিগ্রি চালু করতে হবে। আশা করি সবার প্রচেষ্টায় পবিপ্রবি এগিয়ে যাবে বিশ্বদরবারে।

(ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/মোআ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানিকগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাজা গ্রেপ্তার
উত্তরা রাজউক জোনাল অফিস ঘেরাও করে মানববন্ধন
জুলাই-আগস্টের নৃশংসতা সম্পর্কে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশ ফেব্রুয়ারিতে
রংপুরের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে রাজশাহী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা