বদলে যাওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের গল্প

জুলকারনাইন সায়ের খান সামি
  প্রকাশিত : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:১০| আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:১৮
অ- অ+

চট্টগ্রাম বন্দর দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের শাসনামলে এই বন্দর ব্যবস্থাপনা এতোটাই বাজেভাবে পরিচালিত হয়েছিল যে বন্দরের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্দরের কার্যক্রমকে গ্রাস করেছিল। বন্দরের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হতো নৌবাহিনী থেকে, তবে তা ছিল রাজনৈতিক বিবেচনার ভিত্তিতে। নৌ-বাহিনীর প্রধানের কার্যত এখানে কোনো করণীয় ছিল না। ফলে আওয়ামী সুবিধাবাদী রিয়ার অ্যাডমিরালরা বন্দরের চেয়ারম্যান পদে আসীন হয়ে আওয়ামী নেতাদের দুর্নীতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতেন।

কিন্তু ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর নৌবাহিনী প্রধান একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। তিনি খুনি রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহেলকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর বর্তমান সবচেয়ে যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাকে বন্দরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন।

১১ আগস্ট রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বন্দরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই বন্দরে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হয়। যে পরিবর্তনগুলো আমি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রমাণসহ পেয়েছি তা নিচে তুলে ধরা হলো-

* বর্তমান সময়ে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় একদিনে নেমে এসেছে, যা পূর্বে ছিল ৬-৮ দিন।

* চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে বর্তমানে বন্দরে সর্বোচ্চ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে।

* অবৈধভাবে দখলকৃত বন্দরের ৫০০ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে।

* বন্দরের অবৈধ সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে পণ্যের স্থানান্তরের খরচ ২৫% কমেছে।

* শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের সকল বকেয়া বেতন ও ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে।

* বন্দরের সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

* বন্দরের দুর্নীতি রোধকল্পে তিনি বার্থ অপারেশনকে OTM করার কার্যক্রম সম্পন্ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

* চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এ জে এম নাসিরের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মনিরুজ্জামান যখন দেশের অর্থনীতিতে সক্রিয় অবদান রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তখন আওয়ামী দুর্বৃত্তচক্র তার নামে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এটি একটি আজব দেশ বাংলাদেশ, যেখানে দেশের মঙ্গল দেখলে অনেকে তা সহ্য করতে পারে না। মনিরুজ্জামান সাহেবের মতো লোকের বিরুদ্ধে যারা দুর্নীতির অভিযোগ তোলে, তারা একটু নিজের ছবি আয়নায় দেখে নিন। বাস্তবতা হলো, আপনাদের "APA" আর ফিরে আসবে না এবং খুনি সোহেলের যথাযথ শাস্তি হবে। এটি যত দ্রুত মেনে নেবেন, ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।

অনেকে অভিযোগ করেছেন, বর্তমান বন্দরের চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দুবাইয়ের একটি কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছেন। বাস্তবতা হলো এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বন্দরের চেয়ারম্যানের নেই। তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, তিনি টেন্ডারের শর্ত পরিবর্তন করেছেন। তিনি শুধুমাত্র CCT এবং NCT-তে যেন বেশি লোক অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য টেন্ডারের শর্ত কিছুটা শিথিল করেছেন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, বন্দর একটি স্পর্শকাতর জায়গা। এটি যাদের অভিজ্ঞতা নেই তাদের হাতে গেলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। এই টেন্ডারের শর্ত ছাড়া তিনি অন্য কোনো টেন্ডারের শর্ত পরিবর্তন করেননি।

একজন সৎ এবং যোগ্য কর্মকর্তা নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সবার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বরং তাঁকে সবাই সহযোগিতা করলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। অযাচিত এবং মিথ্যা অভিযোগে জর্জরিত করে তাঁর কাজের গতি কমিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না।

লেখক: প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বার্ষিক ওরস শুরু শনিবার
আমিরাত সফর শেষে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা 
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রাইজমানি ঘোষণা, কত পাবে চ্যাম্পিয়ন দল
সিরাজদিখান থানায় হামলা: ৬০ জনকে আসামি করে মামলা, গ্রেফতার ২ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা