তারেক রহমানের মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল কিসের ইঙ্গিত?

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫১| আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৮
অ- অ+

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিএনপির মতবিরোধ কি দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চারটি মামলা বাতিলের হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সিদ্ধান্তের কারণে।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির এই চারটি মামলা হয়েছিলো ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব মামলা নিম্নআদালতে চলমান ছিল। তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এসব মামলা বাতিলের জন্য হাইকোর্টে আবেদনও করা হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাইকোর্ট মামলা চারটি বাতিলের আদেশ দেয়।

নতুন বছরের ৪ জানুয়ারি শনিবার এসব মামলা বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এতে মামলা বাতিলে হাইকোর্টের আদেশ সঠিক হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রবিবার জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে এই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরেননি। এসময় কয়েকবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওযার কথা উঠলেও তিনিও এখন পর্যন্ত বিদেশে যাননি। এমন প্রেক্ষাপটেই মাঝে একবার রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস টু’ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।

এক-এগারোর তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় এই ‘মাইনাস টু’ ছিল রাজনীতি থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে নির্বাসন দেওয়া। আর ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরবর্তী সময়ে এই ‘মাইনাস টু’ হয়ে উঠে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় করে দেওয়ার পরিকল্পনা। বলাবলি হচ্ছিলে, একজনকে চিকিৎসার নামে বিদেশে পাঠিয়ে আর ফিরতে দেওয়া হবে না, অন্যজনকে তার মামলা ঝুলিয়ে রেখে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না। তারেক রহমান দেশে ফিরে না আসার অন্যতম কারণ মনে করা হচ্ছিল তার বিরুদ্ধে সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার ও পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া বিভিন্ন মামলা। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমানকে নি¤œআদালত সাজাও দেয়। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল আবেদনের রায় এসেছে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর। হাইকোর্ট এই সাজা বাতিল করে দিয়েছেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ইদানিং বিএনপির সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। দলের বিভিন্ন নেতার বক্তৃতা-বিবৃতিতে বিষয়টি দ্ব›েদ্বর পর্যায়েই চলে গেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এমনই সময় তারেক রহমানের চাঁদাবাজির মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করাকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তাদের মতে, নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধে সরকার তারেক রহমানকে মানসিকভাবে চাপে ফেলতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। অবশ্য এর আগে বিএনপির কেউ কেউ তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে এভাবে মামলা বাতিলের বদলে তারা নি¤œআদালতের রায়েই মামলা থেকে খালাসের পক্ষে বলে জানিয়েছিলেন। তবে সেসব কথা অতটা জোরালো ছিল না। চাঁদাবাজির মামলা বাতিলে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সেই উদ্দেশ্যে করা হলেও এভাবে মামলা থেকে খালাস পাওয়া বেশ খানিকটা সময়সাপেক্ষ বলেও মনে করেন আইনজীবীরা। তাই যেভাবেই হোক, রাষ্ট্রপক্ষের এই আপিলকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা আরও কিছুদিন ঝুলিয়ে রাখার কৌশল বলে সন্দেহ করছে রাজনৈতিক মহল।

আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ শুনানি শেষে এই আপিল আবেদন গ্রহণ করে কিনা তা দেখার আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক মহলের এই সন্দেহ দূর করার হওয়ার কোনো উপায়ও নেই।

(ঢাকাটাইমস/০৫জানুয়ারি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গণঅভ্যুত্থানে নিহত জসিমের কন্যার আত্মহত্যা: শোকাহত পরিবারের পাশে তারেক রহমান
আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারানো ছাত্রদলের দুই নেতার পাশে তারেক রহমান
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশে সংস্কার করে আসছে বিএনপি: তারেক রহমান
বিএনপির ওপর নির্যাতনের প্রতিশোধ হবে ৩১ দফা বাস্তবায়ন: তারেক রহমান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা