জবওয়ে কোচিং সেন্টার
এয়ার হোস্টেস কোচিংয়ে নারীকে অশালীন প্রস্তাব এমডির, প্রমাণ পেল পুলিশ

এয়ার হোস্টেস কোচিংয়ে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন একজন নারী। ‘জবওয়ে কোচিং সেন্টার’নামের এক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধে উঠেছে এই অভিযোগ। পুলিশি তদন্তে সত্যতা মিলেছে অভিযোগের।
এর আগে ওই নারীর মামলায় কোচিং সেন্টারটির এমডি সোহেল রানা ফ্রিজকে গ্রেপ্তারের করে পুলিশ। এক মাস কারাবাসের পর তিনি জামিনে মুক্ত হন।
গত বছরের ৭ জানুয়ারি বিকালে জবওয়ে কোচিং সেন্টারের এমডি সোহেল রানা ওই নারীকে হোটেলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়। দীর্ঘ তদন্তে যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পেলে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ গত ৪ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর ফার্মগেটে ইন্দিরা রোডের জবওয়ে কোচিং সেন্টারে ৩১ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হন। কয়েক দিন পর কোচিং সেন্টারের এমডি সোহেল রানা ওই নারীকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন। রানা তার নিজের মোবাইল ফোন নম্বর থেকে হোয়াটস অ্যাপে প্রায়ই অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে বিভিন্ন মন্দ প্রস্তাব দিতেন ওই নারীকে। এমনকি সরাসরি শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাবও দেন তাকে।
সোহেল রানার ক্রমাগত এমন আচরণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ওই নারী। তার ভাষ্য, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বিকালে তিনি কোচিংয়ে গেলে সোহেল রানা তাকে বলেন, ‘তোমাকে আমি জব দিয়ে দিব, তুমি আমার সাথে হোটেল চলো’। তাতে রাজি না হলে সোহেল রানা ওই নারীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন।
এক পর্যায়ে বিষয়টি সোহেল রানার স্ত্রীকে জানান ওই নারী। এরপর থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ গত বছরের ২ এপ্রিল সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে। এক মাস কারাগারে থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি।
পুলিশের প্রতিবেদনে পর্নোগ্রাফি আদান-প্রদান নিয়ে তথ্য
আলোচিত এই ঘটনায় সম্প্রতি আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে সোহেল রানার মোবাইল ফোন থেকে ওই নারীকে অশ্লীল ছবি পাঠানোর প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। সোহেল রানার তিনটি মোবাইল ফোন সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একটিতে পর্নোগ্রাফি আদান-প্রদান করার তথ্য পাওয়া যায়।
সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, আলামত হিসেবে জব্দ করা ওয়ানপ্লাস মোবাইল ফোনে জবওয়ে নামে হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে। মোবাইলটি পরীক্ষা করে পর্নোগ্রাফি আদান-প্রদানের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ওয়ানপ্লাস ব্রান্ডের আরেকটি মোবাইল ফোনে পর্নোগ্রাফি ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। ওই পর্নোগ্রাফি ছবি-ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয়। ওই মোবাইল ফোনে নারীর আপত্তিকর এবং নারী-পুরুষের আপত্তিকর যুগল ছবি ধারণ করে সংরক্ষণ করার তথ্য মিলেছে। জব্দ করা আরেকটি স্যামসাং মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপস ইনস্টল পাওয়া যায়নি।
মামলার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগী নারী কোচিং সেন্টারে অধ্যয়নকালে গত বছরের ১৫ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে তাকে অশ্লীল ছবি পাঠানো এবং শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাই ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
বগুড়ার সোনাতলার হাট করমজা গ্রামের সাইফুল ইসলাম টিটুর ছেলে সোহেল রানা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে সোহেল রানা বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান একজন নারীকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করায়। ওই মামলায় বেশ কিছুদিন জেলে ছিলাম। তবে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক না।’
পুলিশি তদন্তে ভুক্তভোগীর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে এমনটি জানালে সোহেল রানা বলেন, ‘এটা আমার অফিসের ফোন থেকে অশ্লীল ছবি দেওয়া হতে পারে। এর সঙ্গে আমি জড়িত না। আর এটা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের কী আছে! এটা থানা পুলিশ দেখবে।’তার প্রতিপক্ষদের বিষয়ে অনেক মামলা-মোকাদ্দমা করেছেন বলে জানান সোহেল রানা।
এই মামলায় আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম আজম ঢাকাটাইমসকে বলেন, সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত এখন জামিনে আছেন।
(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/এসএস/মোআ)

মন্তব্য করুন