চুরি ও পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশ থেকে চুরি যাওয়া ও পাচার হওয়া শত শত বিলিয়ন ডলার ফেরত আনতে শীর্ষস্থানীয় বিশ্বনেতা ও ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ব্যস্ত দিন কাটান প্রধান উপদেষ্টা। এদিন তিনি শীর্ষস্থানীয় বিশ্বনেতা, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বিশ্বনেতাদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেন জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও বিশেষ কার্যাদির ফেডারেল মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিট, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেটংটার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রাক্তন মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি এবং প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যদের সঙ্গে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলে বাংলাদেশে কিভাবে প্রকাশ্যে ও দিবালোকে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছিল তা খতিয়ে দেখার জন্য বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে পাঠাতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সচিব লামিয়া মোর্শেদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
লুৎফে সিদ্দিকী জার্মান মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিটকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, সরকার এ বিষয়ে একটি সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
তিনি বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ২০ জন অর্থ পাচারকারীকে তাদের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে চিহ্নিত করেছে।
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জার্মান মন্ত্রীকে বলেন, ‘আমরা যখন নতুন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলি, তখন আমরা পরিষ্কার বাংলাদেশের কথাও বলি।’
এদিকে বুধবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় তার কাছে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা।
অধ্যাপক ইউনূস ক্রিস্টিন লাগার্ডেকে বলেন, ‘স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরা শুধু দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করেছে এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে দেশ থেকে পাচার হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি ছিল একটি বিশাল ডাকাতি।’ তিনি উল্লেখ করেন, প্রথমে এই ধনকুবেররা ব্যাংক দখল করে নেয় এবং পরে যে ঋণ নিয়েছে, তা আর পরিশোধ করেনি।
লাগার্ড অন্তর্বর্তী সরকারের পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার উদ্যোগে সমর্থন জানান এবং তিনি সুপারিশ করেছেন যে, বাংলাদেশ এই অর্থ পুনরুদ্ধার ও দেশে ফেরানোর জন্য আইএমএফের সাহায্য নিতে পারে।
বৈঠকে তারা জুলাই বিপ্লব এবং বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। লাগার্ড বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তার সমর্থনের কথাও ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সরকারি সফরে গত সোমবার সুইজারল্যান্ড যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/এজে)

মন্তব্য করুন