ফ্রুটিং ব্যাগে ঝিনাইদহে কলা চাষে নতুন সম্ভাবনা

ঝিনাইদহে প্রচুর পরিমাণে কলা উৎপাদিত হয়। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে জেলায় কলার আবাদ হয় ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। অন্যান্য আবাদের চেয়ে কলা চাষে কৃষকদের কম পরিশ্রম করতে হয়। ঝড় ও কীটপতঙ্গের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে কলা একটি লাভজনক আবাদ। শীতকালে কলার কাদিতে মশা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ বেশি আক্রমণ করে। ফলে কলার গায়ে স্পট তৈরি হয়, পাকলেও কলার মধ্যে শক্ত হয়ে থাকে। কীটপতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সম্প্রতি ঝিনাইদহে রুরাল রিকনস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশন (আরআরএফ) ও কেমোনিক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের দুটি এনজিও’র সহায়তায় নিরাপদ কলা আবাদ শুরু হয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, যশোর সদর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার এক হাজার কৃষককে নিরাপদ কলা চাষের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে উন্নতমানের টিস্যুকালচার চারা। বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে ১০ হাজার ফ্রুটিং ব্যাগ। কলাকে কীটপতঙ্গ ও মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কীটনাশকের পরিবর্তে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক নন্দ দুলাল কবিরাজ এনজিও দুটির সহায়তায় প্রায় দুইবিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছেন। তার ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় কাদি আসা কলাতে ফ্রুট ব্যাগ পরানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের ফলে মশা ও কীটনাশকের আক্রমণ থেকে কলা রক্ষায় কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। কলা এমনিতেই একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। তারপরেও এই কলা আরও নিরাপদ। দেশের বিভিন্ন সুপারশপেও এই কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
নন্দ দুলাল কবিরাজকে দেখে একই গ্রামের পরিমল কবিরাজও কলায় ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে খরচ কম ও মানসম্পন্ন কলা উৎপাদন করা সহজ।
কলাচাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, আরআরএফ থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কলার ফ্রুট ব্যাগ পেয়ে, বর্তমানে আগের তুলনায় বেশি লাভবান হচ্ছি।
প্রকল্পের ফোকাল পার্সন কৃষিবিদ ড. অসিত বরণ মন্ডল বলেন, নিরাপদ কলা উৎপাদন ও বিপণন সম্পর্কিত প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা কলাচাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছি যার মাধ্যমে টিস্যু কালচারের চারার ব্যবহার, সুষম সার প্রয়োগ, কলার ফ্রুটিং ব্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে এবং কলাচাষিরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং মান সম্মত কলা ভোক্তাদের নিকট পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর এ নবী বলেন, ব্রিটল পোকার আক্রমণ, মশার আক্রমণ ও বাতাশে বিভিন্ন জীবাণু থাকে সেটা কলার সাথে মিশে কলা নষ্ট হয়ে যায়। যেকারণে কৃষক কীটনাশক স্প্রে করে। সেক্ষেত্রে ফ্রুটিং ব্যাগ ব্যবহার করলে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষাসহ কীটনাশক ব্যবহার করা লাগে না। ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য নিরাপদ কলা উৎপাদিত হয়। বাজারে নিরাপদ কলার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চাষিরা এই পদ্ধতিতে চাষ করলে বেশি লাভবান হবে।
(ঢাকা টাইমস/২৪জানুয়ারি/এসএ)

মন্তব্য করুন