লিভার, কিডনি, ফুসফুস সমস্যার অবসান মাত্র ১ গ্লাসেই!

আপনি কি জানেন? পৃথিবীতে সবচেয়ে জটিল রোগের বাসা আপনার লিভার, কিডনি আর ফুসফুসেই! একবার ভাবুনতো? এমন একটি পানীয় যা মাত্র ১ গ্লাস সেবনই আপনার শরীরকে রাখবে নিরাপদ, তবে কেমন হয়? আপনার লিভার, কিডনি, ফুসফুসের সুস্থতা নিশ্চিত করতে কিভাবে সেবন করবেন এই পানীয় জেনে নিন।
- ফুসফুসের সুরক্ষায় পানীয় তৈরি করতে সর্বপ্রথম ১টি প্যানে গরম করতে হবে এক গ্লাস পানি। এরপর এই পানিতে ১ চা চামচ মুলেথি বা যষ্টিমধুর পাউডার মেশাবেন। বেশ ভালোভাবে মেশানো হয়ে গেলে এবার এই পানীয়তে মেশাবেন ১ চা চামচ আদা এবং ১৫-২০ পিস তুলসীর পাতা। এবার সব উপকরণ মেশানো হলে ৩-৪ মিনিট সময় নিয়ে বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণটিকে চুলা থেকে নামিয়ে কুসুম গরম অবস্থা অবধি ঠান্ডা করুন। এবার এই মিশ্রণে মেশান এক চা চামচ মধু ও ১ চামচ লেবুর রস। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আপনার ফুসফুসের সব সমস্যার সমাধান ম্যাজিকাল পানীয়। এই পানীয় সপ্তাহে ১ দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে সেবন করুন। আপনি ফলাফল দেখে চমকে যাবেন। এই পানীয়ই আপনার ফুসফুসের মহৌষধ।
- লিভার সুস্থ ও সতেজ রাখতে পানীয় তৈরি করতে প্রথমেই ১টি পাত্রে ১ গ্লাস পরিমাণ পানি নিন। এরপর সেই পানিতে মেশাতে হবে ১৫-২০টি পুদিনার পাতা এবং ১ চামচ ছেঁচানো আদা। এই মিশ্রণটি ৩-৪ মিনিট ভালোমতো ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণটি ফুটে গেলে এই মিশ্রণে এড করুন ১/২ চামচ গ্রিন টি এবং ১ চামচ পরিমাণে মিল্ক থিসল সিডস। উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে ৫ মিনিট ঢাকা দিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। কুসুম গরম হয়ে গেলে মিশ্রণটিতে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে সেবন করুন। আপনার লিভারের সুরক্ষায় এই পানীয়র জাদুকরী কার্যকারিতা আপনাকে অবাক করবে! এই পানীয় সপ্তাহে ১দিন সেবন করলেই আপনার লিভার ফিরে পাবে সুস্থতা। তবে সপ্তাহে প্রতিদিনও একটানা সেবন করতে পারেন। আবার ১৫ দিন পরপর সেবন করতে পারেন এই পানীয়।
- কিডনি ডিটক্সিফিকেশনের জন্য পানীয় তৈরি করতে প্রথমে ১টি প্যানে ১ গ্লাস পানি নিন। এবার এর মধ্যে এড করুন ১ চামচ কোরিয়েন্ডার সিডস বা ধনিয়ার বিজ। উপকরণ মেশানো পানিকে ৩ মিনিটের মতো ফুটিয়ে নিন। এ পর্যায়ে গ্যাসের ফ্লেম বন্ধ করে পানিটাকে কুসুম গরম অবস্থায় আনুন। এই মিশ্রণে মেশান ১ চামচ এপেল সিডার ভিনেগার আর ১ চামচ মধু। তৈরিকৃত পানীয় সকালে খালি পেটে পান করুন। সপ্তাহে ১ দিন পান করলেও আপনার কিডনির জটিল রোগগুলো ম্যাজিকের মতো উধাও হবেই। তবে সপ্তাহে প্রতিদিনও সেবন করতে পারেন।
*৩টি পানীয়তেই মেশানো উপকরণগুলো আপনার শরীরকে প্রাকৃতিক উপায়ে সজীব ও সুরক্ষিত রাখতে জাদুকরী। চলুন জেনে নিই উপাদানগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে।
- তুলসীপাতা
ঔষধিগুণের এই তুলসীপাতা বিভিন্ন রোগ সারাতে কাজ করে। ফুসফুসের দুর্বলতা, কাশি, কুষ্ঠ, শ্বাসকষ্ট, সর্দিজ্বর, চর্মরোগ, বক্ষবেদনা ও হাঁপানি, হাম, বসন্ত, কৃমি, ঘামাচি, রক্তে চিনির পরিমাণ হ্রাস, কীটের দংশন, কানব্যথা, ব্রংকাইটিস, আমাশয় ও অজীর্ণে তুলসীপাতা দিয়ে তৈরি ওষুধ বিশেষভাবে কার্যকর।
- মধু
মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ভেতরে ও বাইরে যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও জোগান দেয়। মধু হৃদরোগ, ওজন কমাতে, অনিদ্রা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর, পাকস্থলীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে খুবই কার্যকরী।
- গ্রিন টি
গিন টি হার্টের সমস্যা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। সবুজ চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ফ্লাভান-3-ওএল এবং অ্যান্থোসায়ানিডিন, যা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পরিচিত। নিয়মিত গ্রিন টি পান হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটা এইডস এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে যা খারাপ কোলেস্টেরল এবং ভালো কোলেস্টেরল, এইচডিএল বাড়ায়।
- আদা
আদা জ্বর, ঠান্ডা লাগা, ব্যথায় উপকারী। অতিরিক্ত ওজন কমাতে আদা সাহায্য করে। বসন্ত রোগে এর রস উপকারী। আদার রস শরীর শীতল করে।
হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী। এক টুকরো আদা চিবিয়ে তার রস নিয়মিত খেলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে। কাশি এবং হাঁপানির জন্য আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে বেশ উপশম হয়।
- লেবু
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড বা ভিটামিন সি রয়েছে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য কোলাজেন উৎপাদনকে উৎসাহিত করে। লেবুতে আরও ভালো হজমের জন্য সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে, যা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
- আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যাদের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে তাদের জন্য। খাবারের আগে চার চা চামচ (20 মিলি) খেলে পেট খালি হওয়া ধীর হয়ে যায়, রক্তে শর্করার বৃদ্ধি কমায় এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ায়, কোষে গ্লুকোজ স্থানান্তর করতে সহায়তা করে।
- যষ্টিমধু
কাশি ভালো করে; এটি তরল আকারে কফ বের করে দেয় এবং খুসখুসে কাশির তাৎক্ষণিক উপশম করতে পারে। এ ছাড়া ব্রঙ্কাইটিস, টনসিলের সমস্যা ও কণ্ঠনালীর প্রদাহ দূর করে। শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন প্রশমিত করে। ত্বক ভালো রাখে; যষ্টিমধু ত্বকের অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস, প্রদাহ, সানবার্নের সমস্যা নিরাময় করে।
- মিল্ক থিসল সিড
সিলিমারিন (দুধের থিসল প্ল্যান্ট ডেরিভেটিভ) হলো একটি ভেষজ ওষুধ বা প্রাকৃতিক ওষুধ যা লিভার/গলব্লাডারের মতো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিষাক্ততা প্রতিরোধ করার যথেষ্ট থেরাপিউটিক সম্ভাবনা রয়েছে। এটি প্রকৃতপক্ষে একাধিক বিষাক্ত পদার্থ, ওষুধ এবং রাসায়নিক দ্বারা সৃষ্ট বিষাক্ত ক্ষতি থেকে লিভার কোষকে রক্ষা করে।
- ধনিয়া
ধনিয়ার বীজ হাড় মেরামত করে। ধনিয়ার পানিতে আছে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। প্রদাহ কমায়, ধনেবীজের পানি শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে, হজমের সমস্যা দূর করে।
*উপরোক্ত উপাদানগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি পানীয়র ১ গ্লাসই আপনার ফুসফুস, লিভার ও কিডনির সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম। আপনার শরীরকে সতেজ ও প্রাণবন্ত করতে এই জাদুকরী পানীয় সেবন করুন।

মন্তব্য করুন