মেঘনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, হুমকিতে তিন সেতু-তেলের ডিপো-সার গুদাম

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনায় অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন করছেন একটি চক্র। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ভৈরব বন্দর এলাকার তিনটি রেল ও সড়ক সেতু, দুটি তেলের ডিপো ও বিএডিসির দুটি সারের গুদাম।
তবে বিআইডব্লিউটিএ’র দাবি, মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে বৈধ কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব বাজার কাঠপট্টি সংলগ্ন এলাকা থেকে কয়েকশ মিটার দূরবর্তী মেঘনা নদীতে একটি চক্র ১০-১৫টি লোডিং ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। সংবাদকর্মীদের দেখে ড্রেজার বন্ধ করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে তারা। তবে বালু উত্তোলনের বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কোনো জবাব দেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ জিয়া ফার্টিলাইজার কারখানার পাশে মেঘনা নদীর তীরে একটি চর জেগেছে। সে চরের কারণে সার কারখানার জেটিঘাটে নৌকা ভিড়তে পারছে না। সে জন্যই বিআইডব্লিউটিএ জেগে উঠা চর ড্রেজিংয়ের জন্য অনুমোদন দেয়।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, চর ড্রেজিং না করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মেঘনা নদী থেকে অবাধে ১০-১৫টি লোডিং ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে চক্রটি। যার ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ভৈরব বন্দরসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
মেঘনায় অবাধে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কারণে গত ২৮ জানুয়ারি গভীর রাতে হঠাৎ মেঘনা নদীর ভৈরব বন্দর ঘাট এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দেয়। এর পরেই মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ২০০ ফুট জায়গা নদীতে তলিয়ে যায়।
এর আগে ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাত দেড়টায় দিকে মেঘনা ব্রিজ সংলগ্ন তেলের ডিপোঘাট এলাকায় নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ১৮০ মিটার ভূমিসহ প্রায় ২০টি কাঁচা ঘর ও যমুনা অয়েল কোম্পানির একাংশসহ বেশ কিছু স্থাপনা মুহূর্তের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছিল। এখনো সর্বহারা হয়ে অসহায় পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এর আগেও ২০২২ সালের ভাঙনে দুটি রাইস মিল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই ঘটনায় দুইজন শ্রমিক প্রাণ হারায়।
মেঘনা নদীতে অবাধে ড্রেজিংয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভৈরব বাজার এলাকার ভৈরব-আশুগঞ্জ ঘাটে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙনের স্থায়ী সমাধান না করতে পারলে হুমকিতে থাকবে বন্দর নগর ভৈরব শহর। সেই সাথে হুমকিতে রয়েছে ভৈরব বন্দর এলাকার তিনটি রেল ও সড়ক সেতু, দুটি তেলের ডিপো ও বিএডিসির দুটি সারের গুদাম।
স্থানীয় রাইস মিল মালিক পিয়াল অভিযোগ করে বলেন, মেঘনা নদীতে অবাধে লোডিং ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভৈরব বন্দর এলাকায় দেখা দিচ্ছে নদী ভাঙন। আমরা গত তিন বছরে তিনবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছি। দুটি রাইস মিল নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শ্রমিক।
এ বিষয়ে বিআইব্লিউটিএ’র আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান বলেন, আশুগঞ্জ জিয়া ফার্টিলাইজার কারখানা সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরে জেগে উঠা একটি চর ড্রেজিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে কেউ যদি গভীর মেঘনা নদী থেকে লোডিং ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে তাহলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা নৌপুলিশের এসপি মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘মেঘনা নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। কেউ যদি নদী থেকে বালু উত্তোলন করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
(ঢাকাটাইমস/১১মার্চ/এজে)

মন্তব্য করুন