দীর্ঘ ১৪ বছর পর শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন
দীর্ঘ ১৪ বছর পর শনিবার (২৩ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক টাউন ফুটবল মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে বঙ্গজ ফ্যাক্টরির মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০২১ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন, আন্দোলন সংগ্রাম, মামলা, হামলা, গ্রেপ্তারের কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করতে পারেনি জেলা বিএনপি। খানিকটা দেরিতে হলেও এবার জেলা বিএনপি বড় আয়োজনে সম্মেলন করতে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ইতিহাসে কোনো খোলা ময়দানে এতবড় আয়োজনে সম্মেলন এই প্রথম। সে হিসেবে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উৎসবের আমেজ।
সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক।
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ, অ্যাডভোকেট শাহজাহান মুকুল, অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার, অ্যাডভোকেট মিল্টন। ইতোমধ্যে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সভাপতি পদে একজন, সাধারণ সম্পাদক পদে দুজন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চারজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু মনোনয়ন পত্র উত্তোলন ও জমা দিয়েছিলেন। একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণার পর স্পষ্ট হয়েছে তিনিই হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি।
এছাড়া, সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিলিমা বিশ্বাস মিলির মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. সফিকুল ইসলাম পিটু, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির নেতা মোহা. খালিদ মাহমুদ, জেলা যুবদলের অর্থ সম্পাদক মো. মোমিনুর রহমান ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। সভাপতি বাদে বাকি দুটি পদে সম্মেলনের দিন নির্বাচন হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপি সম্মেলনের অতিথি তালিকা চূড়ান্ত করেছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
উদ্বোধক হিসেবে সশরীরে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবুর সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে দলের সংকটকালীন মুহূর্তে মাহমুদ হাসান খান বাবুকে আহ্বায়ক এবং শরীফুজ্জামান শরীফকে সদস্য সচিব করে দুই সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এরপর ১৯ জানুয়ারী ২০২২ তারিখে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। ২৭ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা করে।
প্রথম সভাতেই চুয়াডাঙ্গা জেলার ৩৬৯টি ওয়ার্ড, ৪১টি ইউনিয়ন, ৪টি পৌরসভা ও ৫টি থানায় প্রকাশ্য সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের নিয়ে সমন্বয় টিম গঠন করা হয়। সেই টিম প্রকাশ্য সম্মেলন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে।
জেলা বিএনপির সম্মেলন চুয়াডাঙ্গা জেলা ব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গ্রাম থেকে শহরে, চায়ের দোকানে, পাড়া মহল্লায় আলোচনার প্রধান বিষয় এখন জেলা বিএনপির সম্মেলন। সভাপতি কে হচ্ছেন সেটি নিশ্চিত হলেও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দুটি নিয়েও রয়েছে ব্যাপক আলোচনা। তবে সেদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. শরীফুজ্জামান শরীফফের নামটিই অত্যাধিক আলোচিত। লড়াই-সংগ্রামে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া এবং রাজপথে থেকে জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করে বিএনপি নেতা মো. শরীফুজ্জামান শরীফ জেলা বিএনপির পরিক্ষিত নেতা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। তার নেতৃত্বেই গেল বছরগুলোতে চুয়াডাঙ্গায় বিএনপিকে রাজপথে দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রায় ১৭ বছর মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে অবশেষে গত ৫ই আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর অনেকটা মুক্ত পরিবেশ পেয়েছি। দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, আমাকেসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার সর্বোপরি পুলিশ প্রশাসনের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে শঙ্কা ও ভীতির মধ্যেই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া হয়। মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত ও দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের সাহসী ভূমিকার কারণে ইউনিয়নের ওয়ার্ড ও পৌর সভার মহল্লা কমিটি থেকে শুরু করে উপজেলা, থানা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন সুসম্পন্ন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত ঢাকার মহাসমাবেশ, বিভাগীয় মহাসমাবেশ, রোড মার্চ, পদযাত্রা, কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে কেন্দ্র ঘোষিত জেলায় প্রতিটি বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির তৃণমূল পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক দক্ষতায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সফল করা সম্ভব হয়েছে। জেলা বিএনপি মনে করে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে যে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে তা দলীয় কর্মী সমর্থকদের আকাংখা পূরণ এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এখন আমরা জেলা বিএনপির সম্মেলন করতে প্রস্তুত। আগামী ২৩ নভেম্বর সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্র। এখন জেলাব্যাপীই একপ্রকার উৎসবের আমেজ চলছে। সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে এই সম্মেলন শেষ করা হবে।
(ঢাকা টাইমস/২২নভেম্বর/এসএ)মন্তব্য করুন