সিটি করপোরেশনে সেবা পেতে চরম ভোগান্তি রংপুর নগরবাসীর
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণের পর থেকেই জরুরি সেবা নিতে আসা নগরবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। বর্তমানে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। সেই সাথে বাড়তি দায়িত্ব পাওয়া সরকারি দুই কর্মকর্তাও নিয়েছেন স্বেচ্ছায় অব্যাহতি। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড।
নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা দিনের পর দিন ঘুরেও সেবা না পাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে তাদের মধ্যে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১১ লাখ মানুষের এই নগরীর প্রশাসনিক বাড়তি দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছে তারা। প্রতিনিয়ত চাপ সামলাতে হচ্ছে তাদের।
গত ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করেন। পরে ৩৩টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, এরপর থেকেই জন্ম-মৃত্যু সনদ, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন, ওয়ারিশান সনদ ও নাগরিকত্বসহ জরুরি সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। নগর ভবনে দিনের পর দিন ঘুরেও কোনো সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না তারা।
শনিবার বন্ধের দিনও করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে সেবা প্রত্যাশী মানুষ কাউন্সিলরের অফিসগুলোর সামনে ভিড় করছেন। তারা জানান, অনলাইন-অফলাইনে আবেদন করার পর নির্দিষ্ট তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজ পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদনে জন্মসনদ জরুরি হয়ে পড়ছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এই সনদ না পেলে আবেদন করতে পারবেন না তারা। এতে করে তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
আজ রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে নগর ভবনে কথা হয় নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের সাথে। তিনি ছেলের জন্মসনদ নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাকরির সুবাদে রংপুরের বাইরে থাকি। আমার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য জন্মসনদ নিতে এসেছিলাম। কিন্ত নানা জটিলতায় জন্মসনদ পাচ্ছি না। সনদ না পেলে ছেলেকে ভর্তি করাতে পারব না।’
রোকেয়া আব্বাসী নামে এক গৃহবধূর স্বামী প্রবাসী। তাই নিজেই এসেছেন ছেলের জন্মসনদ নিতে। গত এক মাস ধরে নাকি সিটি করপোরেশনে ঘোরাঘুরি করছেন। তিনি বলেন, ‘আজকে এখানকার এক কর্মচারী আমাকে জন্মসনদ নেওয়ার জন্য ডেকেছেন। তবে এখনো পাইনি।’
রংপুর সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, জন্মসনদ, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন, ওয়ারিশান সনদ, নাগরিকত্ব পেতে প্রতিদিন কয়েক শ মানুষ আবেদন করলেও ২০০ আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। বাকিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বাড়তি চাপে ব্যাপক হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
অপরদিকে, সরকারি কাজের বাইরে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মকর্তা বিটিসিএলের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল মালেক ও এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুল ওহাব খান স্বেচ্ছায় অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন।
এদিকে অনেকে এসব সেবা পেতে এবং নানা সমস্যা নিয়ে সাবেক প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাছে যাচ্ছেন বলে জানা যায়ে। কিন্তু তাদের করণীয় কিছু নেই নেই।
সিটি করেপারেশনের সেবা পেতে বর্তমানে বিলম্ব ও হয়রানির কারণ হিসেবে সাবেক প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু বলেন, ‘আমরা যাদের চিনি, জানি তাদের দেখেই নাগরিকত্ব, ওয়ারিশ সনদ এবং জন্মসনদ দিয়ে দিতাম। এখন সরকারি কর্মকর্তারা তো চিনেন না, তাই সমস্যা হচ্ছে। এতে মানুষজন প্রতিনিয়ত হয়রানিতে পড়ছেন।’
নগর ভবনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নগরবাসীর কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা এগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। আাশা করছি এই মাসের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন