মিরাজ কেন নয়, কেন তানবীর? রুবেলের পরিবর্তে শুভাশীষইবা কেন?

নিউজিল্যান্ডে পরপর দুটি ম্যাচে হেরে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে করার তেমন কিছু ছিল না, এতবড় স্কোরের বিপক্ষে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে আমি খুবই হতাশ। খেলা দেখে আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কি করলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা?
কি শট খেললেন তামিম, সাকিবরা? আমরা জানি নেলসের উইকেট খুই ব্যাটিং সহায়ক। এই মাঠে স্বাগতিকদের ২৫১ রানে আটকে ফেলাটা অনেক বড় কৃতিত্ব আমাদের বোলারদের। জয়ের সহজ সুযোগ তৈরী হয়েছিল। এক পর্যায়ে রান ছিল এক উইকেটে ১০১। সামনে বড় কোনো টার্গেট ছিল না। রান রেটের বিষয় ছিল না। উইকেট থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছানো কোনো ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু হলো না। ২৫১ রানর ম্যাচে ৬৭ রানে হেরে যাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। বড় হার। এই হার মেনে নেওয়াটা কস্টের।
গত দেড় বছরে দেশের মাটিতে আমরা টানা ভালো করেছি। পাকিস্তানের মতো দলকে হোয়াইটওয়াশ করেছি। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিধর দলগুলোর বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি। এই অবস্থায় আমাদের জন্য পরীক্ষা ছিল দেশের বাইরের সিরিজ। বিশ্বকাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ খেললেও দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ দেশের বাইরে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি। তাই নিউজিল্যান্ড সিরিজ টাইগারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
জেফরি বয়কটরা বারবার বলেছেন, বাংলাদেশকে দেশের বাইরে প্রমাণ করতে হবে। আসলেই তাই। দেশের বাইরের সাফল্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যে সত্যিকারের বড় দল হয়ে উঠেছে সেটা তো দেশের বাইরে ভালো খেলেই প্রমাণ করতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ সবাইকে হতাশ করেছে। এখন তো স্বাভাবিক কারণেই সেই প্রশ্নটা উঠবে, বাংলাদেশ কি আসলেই বড় দল হতে পেরেছে? সমালোচকদের সমালোচনার রসদ তৈরী করে দিচ্ছে টাইগাররই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে সুনাম তৈরী হয়েছিল, তার গায়ে আঁচড় লেগেছে বলে আমার মনে হচ্ছে।
দ্বিতীয় ম্যাচে মোস্তাফিজ ছিলেন না।তবে তার অভাবটা টের পেতে দেননি মাশরাফিরা। বোলাররা পারলেও পুরোপুরি ব্যর্থ হলেন ব্যাটসম্যারা। মুশফিক নেই। তাই অন্যদের উপর বেশি দায়িত্ব ছিল। কি শট খেললেন তামিম? বল বোলারের হাতে থাকা স্বত্ত্বেও রানের জন্য কেন দৌঁড় দিলেন ইমরুল কায়েস? রিয়াদের আউট নিয়ে বলার কিছু নেই। যে বলে সে বোল্ড হয়েছে তাতে করার কিছুই ছিল না ওর। কিন্তু সাকিব কি করলেন? যে বলে তিনি আউট হলেন সেরকম বলে তিনি হরহামেশাই চার মারেন।
একাদশ নির্বাচন নিয়েও আমার কথা আছে। এক ম্যাচে তিন জনের অভিষেক আমার আমাকে বিস্মিত করেছে। সোহানের ব্যাপারটা না হয় অবধারিত ছিল, কিন্তু রুবেলের পরিবর্তে শুভাশীষ জায়গা পান কোন যুক্তিতে? এই ধরনের উইকেটে রুবেল তো বেশ ভালো করে থাকেন। সাধারণ মানুষ যেটা বুঝেন সেটা কোচরা কেন বুঝতে পারেন না? আমি জানতে চাই, কোন যুক্তিতে মেহেদী মিরাজকে না নিয়ে তানবীরকে একাদশে নেওয়া হয়েছে? ঘরোয়া ক্রিকেটে কি বীরত্ব দেখিয়েছেন তানবীর? জাতীয় দলে খেলার মতো কতটুকু যোগ্যতা আছে এই লেগ স্পিনারের সে বিষয়ে আমার জোরালো প্রশ্ন টিম ম্যানেজমেন্টর কাছে।
মিরাজকে বসিয়ে রেখে মেহেদীকে খেলানোর সিদ্ধান্ত দলের জন্য শুধু ক্ষতিকরই নয়, রীতিমত অন্যায়। অন্যায় মিরাজের প্রতি, দলেল প্রতি এবং দেশের প্রতিও। কে কি মনে করেন তা জানি না, অন্তত আমি এটা মনে করি এবং বিশ্বাস করি।নিউজল্যান্ড দলে চারজন বাঁহাতি ব্যাটসমান জেনেও লেগ স্পিনার মেহেদীকে দলে নেওয়াটা খুবই কাঁচা সিদ্ধান্ত।
মিরাজ তো পরীক্ষিত অলরাউন্ডার। নেলসের উইকেটে ওর অফ স্পিন বেশ কাজে আসতো বলে আমার মনে হয়েছে। কিইউ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন অফ স্পিন বল করে তিন উইকেট পেয়েছেন। মিরাজ ভালো একজন অফ স্পিনার সেটা তো ইংল্যান্ড সিরিজে ভালোমতোই প্রমাণ করেছে। তার ব্যাটিং পারঙ্গমতার কথাও আমাদের জানা আছে। বয়সভিত্তিক দলে সে ব্যাট হাতেও নিয়মিত আলো ছড়িয়েছেন। হ্যাঁ, সে হয়তো সেভাবে বড় শট খেলতে পারেন না, তবে উইকেটে টিকে থেকে আস্তে ধীরে রান করার যোগ্যতা তার আছে।
দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত থেকেছি, অনুসরণ করে আসছি। ভালো ফল উদ্বেলীত করে। খারাপ করলে কস্ট পাই বটে, তবে আশা ছাড়ি না। আমি আশাবাদি, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। টি-২০ সিরিজ ও টেস্ট সিরিজের আগে একটা জয় খুবই দরকার টাইগারদের জন্য। আমি আশায় রইলাম।
খন্দকার জামিল উদ্দিন : সাবেক সিসিডিএম চেয়ারম্যান ও বিসিবি পরিচালক

মন্তব্য করুন