মগবাজারে খোঁড়া পথে গাড়ি চলছে খুঁড়িয়ে, যানজট

মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের জন্য তিন বছর ধরে ভোগান্তির শেষ ছিল না মগবাজার মোড় সন্নিহিত রাস্তাগুলোর। ফ্লাইওভারের হলি ফ্যামিলি-সাতরাস্তা অংশ চালু হওয়ার বেশ অনেক দিন পর এর নিচের রাস্তা মেরামত করা হয়। সেটাও বেশি দিন হয়নি, মাসখানেক হবে। এরই মধ্যে খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়েছে মগবাজার থেকে কাকরাইল দিকের রাস্তাটি। ওদিকে আগে থেকে ভাঙাচুরা মগবাজার-মালিবাগ রাস্তায় পড়েছে খোঁড়াখুঁড়ির কোপ। ফলে আবার ভোগান্তি, আবার যানজট। খুঁড়িয়ে খুড়িযে চলছে যানবাহন।
সংস্কার করা সড়ক দিয়ে কদিন যাতায়াত করতে করতে পথিক হঠাৎ একদিন সকালে দেখল তার আর সড়ক পার হওয়ার জো নেই। যাত্রীর গাড়ি থেমে গেছে। কারণ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) মূল সড়কের পাশ ধরে চালাচ্ছে খোঁড়াখুড়ির কাজ। পাশে স্তূপ করা মাটি। সড়কের উভয় পাশে এক লাইন ধরে চলছে গাড়িগুলো।
রবিবার সন্ধ্যায় ফ্লাইওভারের হলি ফ্যামিলি অংশে গিয়ে দেখা যায়, খোঁড়খুড়িতে ‘বেদখল’ হয়ে গেছে সড়কের দশ ফুটের মতো অংশ। ব্যস্ত এই সড়কে গাড়ি চলছে এক লাইন। ফলে পেছনে লেগেছে জট।
আর মৌচাক থেকে মগবাজারমুখী পথে গাড়ি চলাচল তো প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ করে রাখা হয়। ফলে বাধ্য হয়ে ঘুরপথ ধরে অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়ং বলে জানান কয়েকজন চালক। এখন গাড়ি চলাচলে রাস্তাটি খুলে দেয়া হলেও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যানজট বেড়েছে আরো।
রোকন রহমান নামের এক বাসচালক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কদিন পরপর রাস্তা কাটেকুটে, আর আমগো ঘুইরা অন্য রাস্তায় দিয়া যাইতে কয়।’
মৌচাক-মগবাজার রাস্তাটি ঠিক করার পর যানজট কিছুটা কমেছিল জানিয়ে রোকন বলেন, ‘চাইর রাস্তার মোড়ে এমনেই টেরাফিক আছে, তার উপরে রাস্তা ভাঙা। গাড়ি স্বাভাবিক গতি দিয়া টানন যায় না।’ বর্তমানে অফিস সময় ও সন্ধ্যার পরে আগের চেয়ে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয় বলে জানান তিনি।
খোঁড়াখুঁড়ির কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) পথ খুঁড়ছে। কারণ কী? জবাবে কাজের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি জানান, ১৩২ কেভি লাইনের জন্য মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার টানা হচ্ছে। এ জন্য চার ফুট চওড়া করে সাত ফুট গভীর গর্ত খোঁড়া হচ্ছে। তবে কাজ শেষ হতে কত দিন লাগতে পারে এ ব্যাপারে তিনি জানেন না।
মগবাজারের বাসিন্দা শামসুজ্জামান লিয়ন বলেন, ‘ওই পথে নিয়মিত আসা-যাওয়া করি। মাটি ফেলার কারণে ফুটপাতেও সামান্য পরিমাণ জায়গায় চলচলে কষ্ট হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘বুঝাই যায় এখানে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে, কাকে কী বলব! এক মাসের মাথায় হঠাৎ মূল সড়ক খুঁড়ে এভাবে পথচারীদের ভোগান্তির মুখে ফেলার কোনো মানে হয় না।’
ব্যবসায়ী আরমান আহমেদ বলেন, ‘ফ্লাইওভার তৈরির কারণে তিন বছরের বেশি সময় ভোগান্তিতে আছিলাম। ভাঙাচুরা আর রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী রাখার কারণে অনেক ধুলাবালি হজম করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাস্তা ঠিক করার পর ভেবেছিলাম এখন একটু শান্তিতে থাকতে পারব, কিন্তু দেহেন তাদের প্লান, এক মাসের মধ্যে খোঁড়াখুঁড়ি।’
এভাবে যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়টি নগর ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা বলে মনে করেন নগরবিদরা। জানতে চাইলে নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন ‘গোটা শহরটাই অপরিকল্পিত। এখানে কে কোথায় কখন রাস্তা খুঁড়ছে এটা বলাও মুশকিল। তবে সারা বছরই যদি এ ধরনের কাজ চলতে থাকে তাহলে নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়বে ছাড়া কমবে না, এটাই স্বাভাবিক। এটাই নগরবাসীর নিয়তি।’
(ঢাকাটাইমস/২জানুয়ারি/এএকে/মোআ)

মন্তব্য করুন