দলের ব্যস্ততায় কাদেরের সড়কে নজর কম: কাঞ্চন

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এখন দলের কাজে ব্যস্ত। তাই আগের মতো তার মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট কাজ সড়কের দিকে নজর দিতে পারছেন না। আর তাতে বেড়ে গেছে সড়ক দুর্ঘটনা। এমনটাই মনে করছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে নিরাপদ সড়ক চাই-এর সপ্তম জাতীয় মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের সড়কমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে যেতেন সড়কের অবস্থা ও যানবাহন চলাচলের শৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ করতে। গাড়ির ফিটনেস, যাত্রী ভাড়া থেকে শুরু করে পরিবহণের নিয়ম ও আইন-কানুন অনুসরণের ব্যাপারে সচেতন করতে দেখা গেছে তাকে। তার এই উদ্যোগ ও তৎপরতা মানুষের কাছে বেশ প্রশংসাও পায়। সড়কে অনেক অনিয়ম কমে আসে। তবে অক্টোবরে নিজ দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর তার এই তৎপরতা কিছুটা কমে যায়।
সেই কথা স্মরণ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আগে আমরা মনে করতাম সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে। কিন্তু সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমেছে।’
কিন্তু চলতি জানুয়ারি মাসে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে উল্লেখ করে নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রতিষ্ঠাতা বলেন, এতে তারা আতঙ্কিত। এ সময় দুর্ঘটনা বাড়ার নানা কারণের মধ্যে সড়কমন্ত্রীর সরেজমিন তৎপরতা কমে যাওয়া একটা কারণ বলে মনে করছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘যোগাযোগমন্ত্রী আগে যেভাবে কাজ করতেন সড়ক নিয়ে, এখন সেভাবে কাজ করতে পারছেন না। এখন তিনি দলের কাজে ব্যস্ত।’
ইলিয়াস কাঞ্চন হুঁশিয়ার করে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব নয়। গত বছর সুইডেন সড়ক দুর্ঘটনা জিরো টলারেন্সে আনতে পেরেছে। আমরা জিরোতে না আনতে পারি, তবে অনেক কমিয়ে আনতে পারব।’
এ জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ থাকা দরকার বলে মন্তব্য করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। বলেন, ‘আইন মানুষকে সচেতন করে তোলে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইন প্রয়োগ নেই সেভাবে। আইনের প্রয়োগ থাকলে আইন নিজেই বলে দেয় কীভাবে মানুষকে সচেতন হতে হবে।’
সড়কের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে জেব্রা ক্রসিং জরুরী বলে মন্তব্য করে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং নাই। স্কুল কলেজের সামনে রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।
স্পিকার শিরীন শারমিন ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, তা না হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালালে চালক, যাত্রী সবার নিরাপত্তা বিধানে সহায়ক হয়। সড়ক নিরাপত্তায় আইনের প্রয়োজনীয়তা নিচসা সামনে নিয়ে আসতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন স্পিকার।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলে ক্যাম্পেইনের ওপর জোর দিয়ে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা বাড়াতে স্কুল-কলেজে ক্যাম্পেইন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। সচেতনতার কারণে বিগত বছরে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে অনেক।
সড়ক নিরাপত্তায় নিচসার তৎপরতার প্রশংসা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘এক কান্না থেকে এক শিল্পী পথে নেমেছিলেন। তার হাত ধরে লক্ষ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে একটি আন্দোলন হয়ে। কাছের কেউ মারা গেলে তার কষ্ট সরাসরি যার জীবনে ঘটেনি, তারা বলতে পারবে না।’
(ঢাকাটাইমস/২৮জানুয়ারি/জিএম)

মন্তব্য করুন