ব্যাপারটা দু'দলের কাজিয়ার নয়

বিষয়টি বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এই দুই দলের মধ্যকার কাজিয়া বা ঝগড়া-ফ্যাসাদের নয়। ব্যাপারটা রাজনীতিবিদদের বানানো সংবিধানের কেতাব এবং তাদের সুবিধামতো বদলানো বিধান মতে শুদ্ধ বা অশুদ্ধেরও নয়। এটা দেশের মালিক যে জনসাধারণ তাদের অধিকারের প্রশ্ন।
যুদ্ধ করে জিতে এ দেশটি বানিয়েছে সাধারণ মানুষ। এটা তাদের গণপ্রজাতন্ত্র বা পিপলস রিপাবলিক। এই পাবলিক ভোট দিয়ে বলে দিবে রাষ্ট্রটি পাঁচ বছরের জন্য কারা চালাবে। এখন দেশে পাবলিকের ঠিক করে দেওয়া সরকার নেই। ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারিতে জনগণ সরকার গড়ার জন্য ভোট দেয়নি বা দিতে পারেনি। ফলে পার্লামেন্টে যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকার গড়া যায় সেই পরিমাণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সিট আওয়ামী লীগ বিনা ভোটে বা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই পেয়ে গেছে। এরপর বাকি সিটগুলোতে ভোট দেয়া না দেয়া সমান কথা। তাই পাবলিক আর ভোট দিতে যাওয়ার আগ্রহ বা উৎসাহ দেখায়নি।
কেন এ অবস্থা হলো? এর কারণ বিএনপিসহ প্রায় সব বিরোধীদল ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। তাদের দাবি ছিল ভোটের সময় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা প্রতিদ্বন্দ্বী সব দলের জন্য সমান সুযোগ ও সমঅবস্থান। অর্থাৎ কোনো দল ক্ষমতাসীন এবং কোনো দল ক্ষমতাহীন অবস্থায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। সবাই বাইরে থাকবে। ভোটের সময় একটি নির্দলীয় প্রশাসন থাকবে যারা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। আওয়ামী লীগ একসময় এই দাবির উদ্যোক্তা হলেও তারা বিরোধীদলের একই দাবি অগ্রাহ্য করে তাদেরকে নির্বাচন বর্জনের দিকে ঠেলে দিয়ে বিনা ভোট, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে সরকার গড়ার সুযোগ নেয়। ফলে সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বহীন পার্লামেন্টে কোনো বিরোধী দল পর্যন্ত নেই। একটি বানানো নকল বিরোধীদল নিয়ে পাতানো খেলা চলছে। এতে জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্রের বারোটা বেজে গেছে।
বিএনপি ভোট বর্জন করে ট্রেন মিস করেছে ও মহাভুল করেছে বলে আওয়ামী লীগ শোরগোল তুলে দোষারোপ করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা যা কিছুই বলুক না কেন বিএনপি ভোট বর্জন করায় নির্বাচন যে প্রহসনে পরিণত হয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রহসনের নির্বাচনে গড়া সরকারও যে প্রহসনেরই সরকার তাতেও কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জনসাধারণ যে ভোটের অধিকার হারিয়েছে সে কথা কাজিয়া ও দোষারোপ করে এবং শোরগোল তুলে আড়াল করা যাবেনা। কাজেই মানুষের ভোটের অধিকার ফেরাতে হবে। জনসাধারণের ভোটে সরকার গঠন করতে হবে। তার জন্য অন্ততপক্ষে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতেই হবে। দলীয় হানাহানি মারামারি যা কিছুই হোক দিন শেষে এর জন্য রাজনীতিবিদদের একটা সমঝোতায় পৌঁছাতেই হবে। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতির দুই প্রধান পক্ষের কোনো এক পক্ষকে সাময়িক দমিয়ে রাখা গেলেও নির্মূল করা সম্ভব নয়। সেই সমঝোতার জন্য সহিংসতার চাপ, রাজনীতির বাইরের চাপ এবং দেশের বাইরের চাপ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করাও বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা।
লেখক-সাংবাদিক এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব

মন্তব্য করুন