চার শিশু হত্যা: সত্য হলো না তিন মাসে বিচারের আশ্বাস

পাভেল ও জাকারিয়া, হবিগঞ্জ থেকে
  প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:৫৬| আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৫০
অ- অ+

হবিগঞ্জের বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চাঞ্চল্যকর চার শিশু খুনের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। হত্যাকাণ্ডের পর তিন মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার আশ্বাস দেয়া হলেও এক বছরেও শেষ হয়নি বিচার। তবে নিহত শিশুদের স্বজনরা এখনো বিচারের অপেক্ষায় আছেন। তাদের একটাই চাওয়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের যেন ফাঁসি দেয়া হয়।

সন্তানদের এমন পরিণতি আজও ভুলতে পারেননি স্বজনরা। তাদের করুন মুত্যু দেখে এখনো ডুকরে কাঁদেন চার শিশুর মায়েরা।

গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে খেলাধুলা করতে গিয়ে চার শিশু নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধান না পেয়ে শিশু মনিরের বাবা বাহুবল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

পাঁচ দিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি ইচাবিল নামক স্থানে মাটির নিচে চাপা দেয়া অবস্থায় চার শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এরা হলেন- বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০), আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাঈল হোসেন (১০)।

গ্রাম্য পঞ্চায়েতে ওই গ্রামের কাজল মিয়ার সাথে আব্দুল আলী বাগালের বিরোধে কাজলের পক্ষ নেয়ায় চার শিশুকে হত্যা করা বলে অভিযোগে উঠে আসে।

ঘটনাটি দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হলে সেদিনই পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল আলী বাগালকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তার দুই ছেলেসহ আরও সাতজনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে বশির মিয়া ও সালেহ আহমেদকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়া শিশুদের অপহরণের দায়ে অভিযুক্ত সিএনজি অটোরিকশা চালক বাচ্চু মিয়া ভারতে পালানোর সময় ২৫ ফেব্রয়ারি র‌্যাবের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়। আটক পাঁচজন কারাগারে আছেন।

তারা হলেন- আব্দুল আলী বাগান, তার ছেলে রুবেল মিয়া, জুয়েল মিয়া, ভাতিজা হাবিবুর রহমান আরজু এবং ছায়েদ মিয়া। অপর আসামি বিলাল মিয়া, উস্তার ও বাবুল মিয়া পলাতক রয়েছেন।

এর মধ্যে আব্দুল আলীর দুই ছেলেসহ চারজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

এ ঘটনায় করা মামলায় গত বছরের ২৯ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন ওসি মোক্তাদির হোসেন নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের বিচারক না থাকায় মামলাটি স্থানান্তর করা হয় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। তারপর থেকে সেখানে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হলেও বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় হাতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চার শিশুর স্বজনরা। তারা জানান, তিন মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার আশ্বাস দেয়া হলেও এখনো তা শেষ হয়নি। কবে বিচার শেষ হবে সে প্রতিক্ষায় রয়েছে তারা। এছাড়া পলাতক তিন আসামি গ্রেপ্তার হবেন কি না সেটি নিয়েও শঙ্কার কথা জানিয়েছে তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার নিহত শিশুদের স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে তাদের মায়েদের শোকার্ত অবস্থায় দেখা গেছে। প্রাণপ্রিয় সন্তানদের কথা মনে আসলে তারা ডুকরে কেঁদে ওঠেন। অনেকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে ফরিয়াদ করছেন। এক বছরে আগের দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়লে তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।

মায়েদের দাবি, তাদের সন্তানতে নির্মমভাবে হত্যার জন্য যারা দায়ী তাদের যেন দ্রুত ফাঁসি দেয়া হয়। তারা বলেন, ‘আমরা বাড়ি-গাড়ি কিছুই চাই না। শুধু খুনিদের ফাঁসি চাই।’

মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকার নিযুক্ত বিশেষ পিপি ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন জানান, মামলাটি বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে। এই পর্যন্ত মামলাটিতে ৫৭জনের মাঝে ৩০জনের সাক্ষ্যগ্রহণ নেয়া হয়েছে। আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত আছে।

ত্রিলোক কান্তি আরও জানান, ‘বিচারক সংকট ও আসামিদের আইনজীবী দেশে না থাকা ও তিনজন আসামি পলাতক থাকায় মামলা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হয়। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্যদের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে বিচারকার্য শেষ হবে। আসামিদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, ‘পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। আশা করছি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের শিগগিরি গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তরুণদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার: রাবাতে আসিফ মাহমুদ
হজব্রত শেষে দেশে ফিরেছেন ৬৩ হাজার ১৮৮ হাজি
৭ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস
রংপুর-৪ আসনে নির্বাচন করবেন এনসিপির আখতার হোসেন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা