রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ‘সভাপতির’ ছাত্রত্বই নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
 | প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০১৭, ২০:০৫

চাঁদাবাজির ঘটনায় নাম আসা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত হওয়া কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরের ছাত্রত্ব নেই। তারপরও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মোখতার এলাহী হলের আবাসিক ছাত্র হিসাবে থাকতেন সেখানে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও সন্ত্রাসের নানা অভিযোগ আছে। শিক্ষকদের ওপরও হামলা মামলার আসামি তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় নথিপত্র অনুযায়ী ২০০৮-২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন শিশির। তিনি সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে সর্বশেষ ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষা দেন। তার চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফলে তাকে 'নট প্রমোট' দেখানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, একজন শিক্ষার্থীকে ছয় বছরের মধ্যে তার কোর্স শেষ করতে হয়। ইতিমধ্যে তার ছয় বছর শেষ হয়েছে। যেহেতু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাস করতে পারেনি সেহেতু তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছিলেন মেহেদী হাসান শিশির। বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে উত্থাপন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেটি নাকচ হয়ে যায়। এর ফলে মেহেদী হাসান শিশিরের পরীক্ষা দেওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। তিনি এখন বহিরাগত।

বিশ্ববিদ্যালয় সুত্র বলছে, একজন শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ তিনটি কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেবার সুযোগ আছে। কিন্তু শিশির চারটি কোর্সে ‘এফ’ পেয়েছেন।

গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শিশির এক দোকান থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। টাকা না দেয়ায় পরে দোকানে হামলা হয় এবং এই ঘটনায় পরে সংঘর্ষ বাধে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও আগুনের এরই মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ১২ জনের নাম আছে।

এই সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায়। পরদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘যাদের ছাত্রত্ব আছে, তারাই কেবল ছাত্রলীগ করবেন।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর উন নবী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শনিবারের পার্কমোড়ে চাঁদাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারিরা অপরাধী হলে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ছাত্রলীগ নেতা শিশিরের ছাত্রত্ব নেই বলেও নিশ্চিত করেন উপাচার্য। তারপরেও তিনি কীভাবে হলে থাকতেন- জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘তিনি একটি ছাত্র সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ছিলেন। তবে এখন কয়েকটি মামলার আসামি তিনি। তাই তাকে হলে থাকতে দেয়া হবে না।’

মামলার পর থেকে শিশির অবশ্য প্রকাশ্যে নেই। তাকে গ্রেপ্তারে ভোরে পুলিশ অভিযান চালানোর আগেই আত্মগোপনে চলে যান তিনি।

শিশিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ পুরনো। বিশ্ববিদ্যালয় সুত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য আব্দুল জলিল মিয়ার আমলে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষক মতিউর রহমান ও বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুহিন ওয়াদুদসহ কয়েকিজন শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের গায়ে মাইকের ব্যাটারির এসিড ছুঁড়ে দেয়াসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচিত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান শিশির। তার বিরুদ্ধে এসব ঘটনায় মামলাও হয়।

ঢাকাটাইমস/০৫মার্চ/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :