ডায়াবেটিস হলে মানুষ সতর্ক হয় ও ভালো থাকে

মুনিরুদ্দীন আহমেদ
  প্রকাশিত : ১৮ মার্চ ২০১৭, ১১:২৭| আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৭, ১১:৩০
অ- অ+

ইনসুলিনের অভাবে শরীরের কোষ সুষ্ঠুভাবে গ্লুকোজের সদ্ব্যবহার করতে পারে না। তাই অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এ অবস্থাকে আমরা বলে থাকি ডায়াবেটিস মেলাইটাস।

ডায়াবেটিস দুই ধরনের। যেসব ক্ষেত্রে প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, তাকে টাইপ-১ ডায়াবেটিস বলা হয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে প্যানক্রিয়াস পর্যাপ্ত পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা শরীর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে উৎপন্ন ইনসুলিন ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারে না।

ডায়াবেটিসের উপসর্গ হল- ঘন ঘন পিপাসা লাগা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, শরীরের ওজন কমে যাওয়া, বেশি ক্ষুধা লাগা, চোখে ঝাপসা দেখা, রোগপ্রবণতা, উগ্রতা, হাত-পায়ের অসাড়তা, ঘন ঘন চামড়া, মূত্রথলি ও দাঁতের মাড়ির সংক্রমণ, সময়মতো ক্ষত না সারা এবং চরম অবসাদগ্রস্ততা।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সেই ডায়াবেটিসকে বলা হয় গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস হলে মানুষ সতর্ক হয়। সুস্থ থাকার জন্য মানুষ খাওয়াদাওয়া, নিয়মকানুন ও জীবনাচরণে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবর্তন নিয়ে আসে। এ কারণে ডায়াবেটিসের রোগীরা বেশ ভালো থাকে এবং সুস্থ জীবন যাপন করে।

অন্যান্য রোগীর মতো একজন ডায়াবেটিসের রোগীরও সকাল বা বিকেলে হাঁটা একান্ত প্রয়োজন। হাঁটা হলো উত্তম ব্যায়ামগুলোর অন্যতম। তবে রোগী হলেই শুধু হাঁটতে হবে তার কোনো মানে নেই। সুস্থ মানুষেরও হাঁটা উচিত। সুস্থ শরীরের জন্য হাঁটা বা ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।

আমাদের মতো দেশে সাধারণত ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগ একটা না বাধালে কেউ পারতপক্ষে হাঁটতে যায় না।ডায়াবেটিস এমনই একটি জটিল ও মারাত্মক রোগ। পর্যাপ্ত হাঁটলে বা ব্যায়াম করলে শরীর ইনসুলিনের মাধ্যমে অব্যবহৃত গ্লুকোজকে অতি সহজে শক্তিতে পরিণত করতে পারে।

ইনসুলিননির্ভর রোগীদের (টাইপ-১ ডায়াবেটিস) এবং কোনো কোনো টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। বেশির ভাগ টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধ গ্রহণ করে। এসব ওষুধ শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় এবং ইনসুলিনকে যথাযথভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।

কোনো কোনো টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগী কোনো ওষুধ গ্রহণ না করেই খাওয়া নিয়ন্ত্রণ, নিয়মকানুন মেনে চলা ও ব্যায়ামের মাধ্যমে পুরোপুরি সুস্থ জীবন যাপন করতে পারে। যেহেতু ডায়াবেটিস মূলত সুগার সম্পর্কিত একটি রোগ, সেহেতু শরীরে সুগার নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক।

ডায়াবেটিসের রোগীদের বেশি কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিশোধিত চিনি ও চিনিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া ঠিক নয়। চিনিসমৃদ্ধ কোমল পানীয়, আইসক্রিম, ক্যান্ডি, চকোলেট বা যেকোনো খাবার যা শরীরে সুগারের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে দেয়, তা খাওয়া ঠিক হবে না। শরীরের মাত্রাতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

স্থূলকায় হলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে শরীরের ওজন কমিয়ে আনুন। বাড়তি ওজন কমিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়। শরীরের ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস, বিভিন্ন হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো জটিল ও মারাত্মক রোগের প্রতিরোধ সহজ হয়। আগেভাগে নিয়মিতভাবে পর্যাপ্ত ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা অনেক হ্রাস পায়।

মানুষ ইচ্ছা করলে ডায়াবেটিসসহ অনেক মারণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এ জন্য দরকার সুস্থ অবস্থা থেকেই সতর্ক জীবন যাপন করা—অর্থাৎ পরিমিত সুষম খাবার খাওয়া, নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করা এবং নিয়মিত পর্যাপ্ত ব্যায়াম করাসহ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা। শরীরের ওজন ঠিক রেখে প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটলে আপনার শরীর অনেক ভালো থাকবে।

লেখক: অধ্যাপক, ক্লিনিকাল ফার্মাসি ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঢাকাসহ দেশের ১০ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস, নদীবন্দরে সতর্ক সংকেত
এক দিনে ইয়েমেন লেবানন সিরিয়া ও গাজায় আক্রমণ, ৫৪ ফিলিস্তিনি নিহত
আম গাছ পাকা নাকি কার্বাইডে পাকানো? চেনার সহজ উপায়
গরমে খান রসালো ফল লিচু, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা