শেখ হাসিনা কঠোর হোন

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
  প্রকাশিত : ০১ এপ্রিল ২০১৭, ১১:৪০| আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৫৭
অ- অ+

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে চলছে উন্নয়ন। মানুষের মধ্যে আসছে প্রাণচাঞ্চল্য। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ইতিবাচক। যেভাবেই হোক বা যে কারণেই হউক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত। এ ধরণের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।

বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, এগিয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এর মাঝেও জঙ্গিবাদ থেকে আসছে বাধা। সাধারণ জনগণের সমর্থন না পেয়ে তারা গুপ্ত আক্রমণ শুরু করেছে। দেশের সকল ভালোর মধ্যে রয়েছে এই মন্দ। এই মন্দের বিরুদ্ধে সরকারকে এখন লড়াই করতে হবে এবং এই লড়াই করতে হবে জনগণকে সাথে নিয়ে, দেশের অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোকে সাথে নিয়ে। একমাত্র তাহলেই সম্ভব হবে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল।

কেবল পুলিশ বা সামরিক বাহিনী দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের ঘটনা আমাদের তাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে এখন বিশেষভাবে ভাবা উচিত।

অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বাধার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সেই অবস্থা নেই। সারা দেশের হাটবাজার এখন জোট জমাট। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে আমি স্বচক্ষেই দেখেছি এমন অবস্থা। মানুষের মাঝে একটা শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। সবাই যার যার দৈনন্দিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

তবে সব ভালোর মধ্যেও একটি মহলে সরকারের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ, নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। অনেকের মতে কিছু কিছু ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা সরকারের ছত্রছায়ায় অবস্থান করে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থের পাহাড় গড়ছে। সরকারের ভেতরে থাকা কিছু মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাদের কার্যকলাপে দেশের মানুষ অসন্তষ্ট। নানা কারণে বিভিন্ন হত্যার বিচার দীর্ঘদিন থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকার থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো কিছু না করার কারণে ধীরে ধীরে সরকারের জনপ্রিয়তা কমে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের জন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সম্ভবনা দেখা দিতে পারে।

আমাদের অতীত ইতিহাস বলে শক্তি দিয়ে কখনো ক্ষমতা ধরে রাখা যায় না। জনগণের সমর্থন হলো আসল শক্তি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বন্দুকের নল নয়, জনগণই আমার ক্ষমতার শক্তি। বর্তমান আওয়ামী লীগ কি এখন এই পথে হাঁটছে?

আজ দেশের বিরোধী দলগুলো অত্যন্ত দুর্বল। এই কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এগিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের ভুলগুলো জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচার ও তার সূত্র ধরে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার মতো সুযোগ কিংবা অবস্থা বিরোধী দলগুলোর নেই। সরকারবিরোধী আন্দোলনের নানা ইস্যু থাকা সত্বেও বিরোধী দলগুলোর নিজস্ব সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে কোন ধরনের সংগ্রামে তারা অগ্রসর হতে পারছে না। বিরোধী দলের এই অপারগতা সরকারের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপবেবহারকারীদের জন্য হয়েছে ইতিবাচক। তারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থের পাহাড় গড়ছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর দশ জন মানুষের মতই একজন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে পিতার স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি রাতদিন সংগ্রাম করছেন। কিন্তু তার এই চলার পথে এখন নিজ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ থেকেই মূলত আসছে প্রতিবন্ধকতা। শুধু কুমিল্লা নয় সঠিকভাবে নির্বাচন হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগকে আরো অনেক আসন হারাতে হবে। বিলম্ব না করে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুর্নীতিবাজ দলীয় নেতা নেত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মন্ত্রিসভা ও দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। এ ধরণের শুদ্ধি অভিযান চালানোর জন্য এক সময় বঙ্গবন্ধুকে ছাত্রলীগ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। বর্তমান ছাত্রলীগের কাছ থেকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানোর ডাক কি আমরা আশা করতে পারি?

বর্তমানে সরকার সমর্থিত বেশ কিছু জনপ্রতিনিধির জনপ্রিয়তা কমে গেছে। কেউ কেউ নিজ এলাকায় খুব একটা যান না। সবাই এখন রাজধানীতেই আস্তানা গড়ে তুলেছেন। কখনো কখনো এলাকায় আসলে তাদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পাহারা প্রয়োজন হয়। আগামী নির্বাচন ঠিকমতো হলে এদের অনেকের হারার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন না নিয়ে সরকারের নীরবতা শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে।

দলীয় লোকদের কারণেই মূলত বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রার জনপ্রিয়তায় বাঁধা হয়ে আছে। অথচ বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে বর্তমান সরকারের আমলে যেভাবে উন্নতির চাকা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে তা অতীতের সকল সরকারের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তবুও কেন কুমিল্লায় এই পরাজয় ?

কট্টর আওয়ামী লীগ পন্থীরা আমার একথা হয়তো স্বীকার করবে না। তবে আমি বলবো বিষয়গুলোকে সরকার ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন রয়েছে। কারণ ক্ষমতা কারো হাতে চিরদিন থাকে না। গণতান্ত্রিক নিয়মে একদিন না একদিন ক্ষমতার পরিবর্তন অবশ্যই আসবে। তবে ইতিহাস বলে জনগনের আস্থাই হলো সবচেয়ে বড় শক্তি। এই শক্তিকে ধরে না রাখতে পারলে কোনো বাহিনী দিয়ে কোনো সরকারকে যেমন অতীতে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি, তেমনি ভবিষ্যতেও যাবে না।

নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাদের লক্ষ্য করে দেওয়া হুংকার বাস্তবে কতটুকু প্রতিফল হবে বলা কঠিন। বিভিন্ন জেলায় সফর করতে গিয়ে তাকেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অন্যদিকে ছাতার মতো মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে গড়ে উঠেছে অনেক সংগঠন। সুবিধাবাদী এই সংগঠনগুলোকে অবিলম্বে বিলুপ্ত ঘোষণা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে জিয়ার নামেও অনেক সংগঠনের আবির্ভাব হয়েছিল, যার নামগন্ধ এখন আর শোনা যায় না। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে এদেরও হারিকেন নিয়ে খুঁজতে হবে। ইতিমধ্যে ওবায়দুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কোথাও বলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এখন কঠোর হওয়ার সময়।

দুর্নীতিবাজ, সুবিধাবাদী, ক্ষমতালোভীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখন। দেশে বিদেশে দলের বিভক্তি, অনৈক্য ও নেতৃত্বের লড়াইয়ের দ্রুত সমাধান করতে হবে। কৌশলে দোষীদের দল থেকে বের করার প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময়মতো শক্ত হাতে এসব সমস্যার সমাধান না করলে ভবিষ্যতে নির্বাচনের ফলাফল অন্যদিকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

ঠিক যেভাবে হয়েছে কুমিল্লার ফলাফল। এই ফলাফল প্রমাণ করেছে বিএনপিকে জয়লাভ করতে হলে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বই যথেষ্ট। তাদের আর কিছুই করার প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগের ভেতরে এধরণের দ্বন্দ্ব এখন দেশ বিদেশে সর্বস্তরে। কী ভাবছে আওয়ামী লীগ? কী ভাবছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা? এখনই সময়। শেখ হাসিনা কঠোর হোন।

লেখক: নির্বাচিত কাউন্টি কাউন্সিলার, স্টকহল্ম কাউন্টি কাউন্সিল, সুইডেন

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নরসিংদীতে ৮ মামলার আসামিকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা
কলরেকর্ড ফাঁসের জেরে থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন বরখাস্ত
চীন থেকে তড়িঘড়ি যে কারণে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা, কিন্তু…
নির্বাচনী বাজেটে কোনো কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা