বেতন নিয়ে শঙ্কায় মাটিকাটা শ্রমিকরা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০১৭, ১১:৫৮

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন রাস্তায় মাটিকাটার কাজে নিয়োজিত ৬৭০ জন নারী শ্রমিক তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। ঈদের আগে বেতন পাবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন তারা।

তাদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। দুই বছর হলো তাদের বেতন ঠিক সময়ে দেয়া হয় না। এবার ঈদের আগেও বেতন না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগে (এলজিইডি) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুরাল এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড রোড মেইন্টেন্যান্স প্রোগ্রাম-২ (আরইআরএমপি-২) প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহ জেলার ৬৭টি ইউনিয়নে ৬৭০ জন নিয়োগকৃত নারী শ্রমিক রয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে নারী শ্রমিকের একটি গ্রুপ রয়েছে। তাদের গ্রুপ কমিটি করা আছে। যার একজন সভাপতি ও একজন সম্পাদক। তারাই সবকিছু দেখাশোনা করেন। আর তাদের কাজ দেখাশোনা করেন এলজিইডির সিও (কমিউনিটি অর্গানাইজার) ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তাদের কাজ গ্রামীণ রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করা, রাস্তার পাশে মাটি দিয়ে ভাঙন রোধ করা এবং রাস্তার ধারের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০১৫ সালের নভেম্বরে দুই বছরের চুক্তিতে তাদের সর্বশেষ নিয়োগ দেয়া হয়। আগামী নভেম্বরে তাদের মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আবারও নিয়োগ হবে।

ওই কর্মকর্তা জানান, এই নারীরা প্রতিদিন ১৫০ টাকা চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। মাস শেষে তাদের বেতন দেয়ার কথা। প্রতি মাসে তাদের পাওনা হয় সাড়ে চার হাজার টাকা। এর মধ্যে দেড় হাজার টাকা জমা রাখা হয়। চুক্তির মেয়াদ শেষে জমাকৃত এই টাকা তাদের ফেরত দেয়া হয়। আর কাজ চলা অবস্থায় প্রতি মাসের বেতন তিন হাজার টাকা মাস শেষে তাদের হাতে বুঝিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু গত দুই বছর তারা ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না।

সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের ষড়াবাড়িয়া গ্রামের রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে ১০ জন নারী কাজ করছেন। এলজিইডির খোয়া ফেলা একটি রাস্তার পাশে তারা মাটি দিচ্ছেন।

মমতাজ বেগম বলেন, স্বামী তাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। দুই সন্তান নিয়ে বাবার সঙ্গে থাকেন। চার শতক জমি কিনে সেখানে মাটির ঘর আর টিনের ছাপড়া করে বসবাস করেন। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ১১ বছরের ছেলে আকাশ অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা ছেড়ে কাঠমিস্ত্রির কাজে নেমে পড়েছে।

তিনি জানান, সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত রাস্তায় মাটিকাটার কাজ করেন। মাস শেষের টাকা দিয়ে সংসার চালান। কিন্তু চার মাস টাকা না পেলে তারা কীভাবে বেঁচে থাকবেন?

একই গ্রুপের সখিনা খাতুন জানান, মাথা গোঁজার মতো কোনো জায়গা নেই তার। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের খালের ধারে সরকারি জায়গায় ঝুপড়ি ঘর বেঁধে বসবাস করেন। তার চারজনের সংসার এই আয়ে চলে। কিন্তু বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ধোপাবিলা রাস্তায় কাজ করা নারী সামছুন নাহার বলেন, তার স্বামী মনির হোসেন আলমসাধু চালান। তিনি কিছু পয়সা উপার্জন করছেন, তাই বেঁচে আছেন। কিন্তু যাদের স্বামী নেই তাদের কষ্টের শেষ নেই। অনেকে ঠিকমতো খেতে না পেরে শরীরের শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। তারা ঈদের আগেই তাদের বকেয়া বেতনের দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ওই প্রকল্পের পরিচালক সালমা শহীদ জানান, প্রকল্পের টাকা ছাড় না হওয়ায় এই বেতন দেয়া সম্ভব হয়নি। ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে তাদের এ বেতন দিতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :