খায়রুল হকের ‘গাত্রদাহ’ দেখছেন ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ আগস্ট ২০১৭, ২০:১২ | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৫৫

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হকের দেয়া প্রতিক্রিয়ার কঠোর সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘এই রায়ের ফলে তাঁর (এ বি এম খায়রুল হক) গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।’

বৃহস্পতিবারে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে খায়রুল হক এবং আইনমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্যে কোনও অমিল নেই। একই সুরে বাধা।’

ফখরুল বলেন, ‘আইন কমিশনের আসনে বসে সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে, মাননীয় প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে তিনি (খায়রুল হক) যেসব উক্তি করেছেন তা শুধু অশালীনই নয়, তা রীতিমত আদালত অবমাননার সামিল।’

বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে এনে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সরকার যা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নামে পরিচিতি পায়। এরপর একজন আইনজীবী এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে রিট আবেদন করলে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর গত ৩ জুলাই এই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগ।

গত ১ আগস্ট আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হয়। এতে ষোড়শ সংশোধনী ছাড়াও শাসন বিভাগের নানা দিক নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বর্তমান সংসদকে অপরিপক্ক, অকার্যকর বলেও সমালোচনা করেন।

বুধবার আদালতের এই পর্যবেক্ষণের তীব্র সমালোচনা করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক। তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের ইস্যুকে বাইপাস করে অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়টি অপরিপক্ক, পূর্বপরিকল্পিত ও অগণতান্ত্রিক। এই পর্যবেক্ষণে মানহানিকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে জুজুর ভয় দেখানো হচ্ছে এবং সংসদ সদস্যদের হেয় করা হয়েছে।’

খায়রুল হক বলেন, ‘অনারেবল চিফ জাস্টিস যদি বলেন, পার্লামেন্ট ইজ ইমম্যাচিউর বা সংসদ সদস্যরা অপরিপক্ক, তাহলে তো আমাকে বলতে হয়, অভিয়াসলি লজিক্যালি চলে আসে, সুপ্রিম কোর্টের জজ সাহেবরাও তাহলে ইমম্যাচিউর। কারণ তারাও তাদের রায়ের মধ্যে সংসদ সদস্যদের বিষয়ে বলেছেন, যা তাদের বলার দরকারই ছিল না।’

সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা এতকাল জেনে এসেছি, দিস ইজ পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, কিন্তু এ রায়ের পরে মনে হচ্ছে, উই আর নো লংগার ইন দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। উই আর রাদার ইন জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ।’

খায়রুল হকের এই বক্তব্য বৃহস্পতিবার সকালেই প্রধান বিচারপতির নজরে আনেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা এসব বক্তব্যকে আদালত অবমাননার শামিল বলে দাবি করেন। তবে প্রধান বিচারপতি সরাসরি কিছু না বলে এই রায় নিয়ে রাজনীতি না করার নির্দেশ দেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব, আপনারা সংযত আচরণ করবেন, যা সবার জন্য মঙ্গল। সরকার বা বিরোধী দল—কারও ট্র্যাপে পড়ব না। আমরা সচেতন। সাতজন বিচারপতি চিন্তাভাবনা করে রায় দিয়েছি। রায় নিয়ে কেউ পলিটিকস করবেন না।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পূর্বেই সাবেক প্রধান বিচারপতি বর্তমান আইন কমিশন চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক রায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেন। বিচারপতি খায়রুল হক তাঁর সময় যেসব রায় দিয়েছেন তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তা দেশের মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।’

বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের আমলে বাতিল সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের ফলে আজ দেশে যে সাংবিধানিক, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা দেশের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ভঙ্গুর করে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্যে কোনও অমিল নেই। একই সুরে বাধা।’

তার (খায়রুল হক) বক্তব্যই আওয়ামী লীগের বক্তব্য এমন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের পরেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অস্থিতিশিলতা এবং হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে।’

‘তিনি (খায়রুল হক) কৃতকর্মের জন্য কোন অনুশোচনা তো করেননি বরং একটি অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।’

ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতারা হতাশ হয়েছেন, সংক্ষুদ্ধ হয়েছেন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘তা তো হবেনই। তাদের সৃষ্ট দানব যে তাদেরকেই গ্রাস করতে চলছে তা এখনও তারা বুঝতে পারছেন না।’

আপিল বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘সীমাহীন দুর্নীতি, দুঃশাসন, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অহংকার আজ স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল স্বপ্ন ও অর্জনগুলিকে ভেঙে চুরে চুরমার করে দিচ্ছে, তা তারা (আপিল বিভাগ)চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।’

‘এই দুঃসময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই রায় সুশাসনের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানবাধিকারের জন্য, নিঃসন্দেহে আশার আলো’-বলেন বিএনপি মহাসচিব।

‘প্রধান বিচার পতির বক্তব্যে ‘আপত্তিকর’ ও ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বক্তব্য আছে, সেগুলো এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগও আমরা নেব’- সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘আইন মন্ত্রী হিসেবে তার একথা বলা একেবারেই উচিত হয়নি। আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব বাংলাদেশের আদালতগুলো যে রায় দেয় সেগুলোকে বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সে দায়িত্ব থেকে তিনি সরে এসেছেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/বিইউ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :