মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি আত্মহত্যা, প্রতিরোধে পুলিশের চিঠি

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০১৭, ১৯:০৪

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ীতে আত্মহত্যার মতো অপমৃত্যুর ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। গত দুই বছরে এই তিন উপজেলায় মোট মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি আত্মহত্যা।

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার মিছিলে যোগ হয় ঝিমাই চা-বাগানের অলক চাষা নামের ২২ বছরের এক শ্রমিক। গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এ নিয়ে গত দুই বছরে তিন উপজেলার বিভিন্ন চা-বাগানে আত্মহত্যা ঘটে ১৯টি।

পাহাড়ি নির্জন স্থান কি আত্মহত্যাপ্রবণতার বড় কারণ? স্থানীয় একজন মনোবিদ বলছেন, সেটি হয়তো ঘটনা ত্বরান্বিত করে, কিন্তু মূলত সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক বন্ধনের অভাব, মাদক, হতাশা- এসব কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে।

কুলাউড়া পুলিশ সার্কেল সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছরে কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী থানায় ১৬৩ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ফাঁসি ও বিষপানে আত্মহত্যা করেছে ৯০ জন।

ওই সময়ে কুলাউড়া থানায় ৮৪ জন মৃতের মধ্যে আত্মহত্যা ২৮টি ও পানিতে ডুবে মৃত্যু ৩০টি। বড়লেখা থানায় মারা যাওয়া ৪৮ জনের মৃতের মধ্যে আত্মহত্যায় মৃত্যু ২৪ ও পানিতে ডুবে নয়টি। জুড়ীতে মৃত ৩১ জনের মধ্যে আত্মহত্যায় মৃত্যু ২৫ জনের।

এসব আত্মহত্যার কারণ জানতে না পারায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায় না বলে জানান কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউছুফ।

তা হলে কি পুলিশ প্রশাসনের এ ব্যাপারে কোনো করণীয় নেই? আবু ইউছুফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, এটা আসলে একজন মানুষের আবেগীয় ব্যাপার। এটি পুলিশের ঠেকানোর কোনো পথ নেই। তবে কী কী কারণে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয় সে ব্যাপারে সচেতনতামূলক প্রচার কাজে দিতে পারে। সেটি করতে পারেন যে কেউ, যেকোনো সংস্থা। পুলিশের এই কর্মকর্তা নিজেও এ ধরনের সচেতনতার বিষয়টি চিন্তা করে স্কুল, মসজিদ, চা-বাগানে চিঠি দেয়ার কর্মসূচি নিয়েছেন।

আবু ইউছুফ ইতিমধ্যে কোরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি ও ব্যাখ্যা সহকারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের চিঠি দিয়েছেন। মাদকবিরোধী নানা কর্মকা- পরিচালনা করছেন। কুলাউরা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঢাকাটাইমসকে বলেন, আত্মহত্যার যেকোনো ঘটনায় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কিংবা সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে যেতে হয়। গত ছয় মাসে ১০-১২টি ঘটনায় তাকেও যেতে হয়েছে ঘটনাস্থলে। এসব ঘটনা বিশ্লেষণে তার কাছে মনে হয়েছে একমাত্র সচেতনতাই পারে আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে।

চলতি বছরের ১৩ জুন কুলাউড়া সার্কেলের আওতাধীন কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী থানার সব জামে মসজিদের ইমামদের চিঠি পাঠান আবু ইউছুফ। তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার চা-বাগানের শ্রমিকদের সচেতন করতে বাগানের ম্যানেজারদের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই। গত দুই বছরে আত্মহত্যাকারী ৯০ জনের পেশা বিশ্লেœষণ করে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। তাই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় চিঠি পাঠানোর কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে অধ্যক্ষ সৌম্য প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং ঝিমাই চা-বাগানের সহকারী ম্যানেজার মো. মনির হোসেনের হাতে সচেতনতার চিঠি দেয়া হয়।

আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানী কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সৌম্য প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, সামাজিক অস্থিরতা আত্মহত্যার প্রধান কারণ। এ ছাড়া পারিবারিক বন্ধনের অভাব, মাদক, হতাশা, পারস্পরিক সহমর্মিতার অভাব এবং দুঃখ ও হতাশা প্রকাশের সুযোগ না পেয়ে মানুষ আত্মহত্যা করে।

(ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/মোআ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :