ঢাকা বোর্ডে দীর্ঘদিন ধরে প্রেষণে ১২ কর্মকর্তা

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট ২০১৭, ০৭:৫৯

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার সচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী। তিনি ঢাকা বোর্ডে প্রেষণে (ডেপুটেশন) আছেন নয় বছর ধরে। ২০০৯ সালে প্রথমে তিনি ছিলেন এই বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক; পরে সচিব হয়েছেন একই বোর্ডের। অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে টানা নয় বছর এই বোর্ডে ডেপুটেশনে আছেন শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তা।

শুধু শাহেদুল খবিরই নন, এ রকম অন্তত ১২ জন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে ডেপুটেশনে এই শিক্ষা বোর্ডে রয়েছেন। এসব কর্মকর্তা সরকারি চাকরির চিরাচরিত প্রথাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন শিক্ষা প্রশাসনের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদ আঁকড়ে আছেন।

সরকারি চাকরিতে প্রচলিত নিয়ম হলো- কোনো পদে তিন বছরের বেশি না থাকা। অর্থাৎ তিন বছর একটি পদে ডেপুটেশন বা চলতি দায়িত্ব পালন করা হয়। এরপর তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনের প্রচলিত এই নিয়ম যেন অধরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষা ক্যাডারের ১২ জন কর্মকর্তা ডেপুটেশনে আছেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি ১১ জন কর্মকর্তাই তিন বছরের বেশি সময় ধরে ডেপুটেশনে এই বোর্ডে কর্মরত। এর মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার ২০০৯ সাল থেকে বোর্ডে ডেপুটেশনে কর্মরত আছেন। তিনি প্রথমে ছিলেন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। ২০০৯ সাল থেকে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত আছেন মাসুদা বেগম। শিক্ষা বোর্ডের উপসচিব নাজমুল হক ২০০৯ সাল থেকেই এই শিক্ষা বোর্ডে ডেপুটেশনে আছন।

বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক এ টি এম মইনুল হোসেন ২০১৩ সাল থেকে ডেপুটেশনে আছেন। ২০০৯ সালে প্রথমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে ডিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ২০১৩ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন।

কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাক সালেহীন ২০০৯ সাল থেকেই ডেপুটেশনে আছেন। প্রথমে তিনি মাউশির ডিডি ছিলেন। পরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ডেপুটেশনে আসেন। মাইনুল ও সালেহীন সম্প্রতি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু এরপরও তারা আগের পদেই থেকে যাচ্ছেন।

২০১২ সাল থেকে অদ্বৈত কুমার রায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ডেপুটেশনে আছেন। প্রথমে ছিলেন কলেজ শাখার উপপরিদর্শক পরে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পান। উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আল মাসুদ করিমের মেয়াদও তিন বছর উত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি ২০১৪ সালে এই পদে ডেপুটেশনে আসেন। ২০১৩ সাল থেকে বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক একান্ত সহকারী (এপিএস) মনমন্থন রঞ্জন বাড়ৈই। আর এই বোর্ডের সবচেয়ে নবিন কর্মকর্তা হলেন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তারেক বিন আজির। তিনি দেড় বছর হলো এই পদে এসেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সরকারি চাকরির রীতি অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা এক স্থানে তিন বছর থাকতে পারেন। সাধারণত তিন বছর পর পর বদলি করা হয়। কিন্তু কেউ যদি এর চেয়ে বেশি সময় একই পদে থাকেন সেটা বেআইনি হবে না, তবে রীতিবহির্ভূত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষা প্রশাসনে বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা নিজেদের দলীয় আনুগত্য ও শক্তি দিয়ে একই পদে অনেক দিন ধরেই থেকে যাচ্ছেন। তাদের কাউকে কাউকে সরানো হলেও আবার ঘুরে-ফিরে একই স্থানে চলে আসছেন।’ এই গ্রুপটি বেশ শক্তিশালী বলে মনে করেন তিনি।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (আইন কর্মকর্তা) আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আসলে সরকারি চাকরিতে একই পদে একজন কর্মকর্তা কত দিন থাকবেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান বা আইন নেই। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের সময়সীমা নির্ধারিত আছে। সর্বোচ্চ তারা একসঙ্গে তিন বছর থাকতে পারে। কিন্তু অন্যান্য কর্মকর্কাতের বিষয়ে সে রকম কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে সাধারণ যে প্রথা সেটি হলো তিন বছর পরপর বদলি বা ডেপুটেশন পরিবর্তন হয়। কিন্তু সেটা আসলে নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা শাখার ওপর।’

(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :