দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিচ্ছি: মোস্তাফা জব্বার

আসাদুজ্জামান
ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৩:২৫ | প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৩:০৫

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে গত ১১ মে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। আর এর মাধ্যমে মহাকাশে ঠিকানা পেল বাংলাদেশ। দেশের প্রথম এই স্যাটেলাটের সর্বশেষ খবর পাঠকদের জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- এর সর্বশেষ অবস্থা কী?

মোস্তাফা জব্বার: স্যাটেলাইট যথারীতি উৎক্ষেপণের পর থেকে আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সঠিকভাবে কাজ করছে। এটা চরমভাবে একটি আনন্দের বিষয়। কারণ এখনও পর্যন্ত কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।

বঙ্গবন্ধু- এর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এখন কাদের হাতে?

মোস্তাফা জব্বার: আমরা এটা এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করছি। বাংলাদেশ থেকেই। আমাদের ছেলেমেয়েরা সেই কাজটা করছে। এবং আমাদের কাছে এটা গর্ব করার বিষয় যে, আমরা এরকম একটা স্তরে আসতে পেরেছি।

কবে থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি পরিচালনায় যাবে বাংলাদেশ?

মোস্তাফা জব্বার: আমাদের সম্ভাব্য পরিচালনায় যাওয়ার সময় হচ্ছে ১ সেপ্টেম্বর। আমরা আশা করি এর মধ্যেই থ্যালাসেট আমাদের কাছে স্যাটেলাইট হ্যান্ডওভার করবে। ৩১ আগস্ট আমরা স্যাটেলাইটের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেব। এরপরই এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক ব্যবহার কবে থেকে শুরু হবে?

মোস্তাফা জব্বার: ১ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা কমার্শিয়াল অপারেশনের যেতে পারবো।

স্যাটেলাইটটি ব্যবহার করতে ইচ্ছুক এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে কি?

মোস্তাফা জব্বার: আমরা সম্প্রতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছি। নৌ-বাহিনীর সঙ্গে আরেকটি চুক্তি হবে। এছাড়াও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেকটি চু্ক্তি হবার কথা রয়েছে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় কী কাজে এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করবে?

মোস্তাফা জব্বার: নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এই স্যাটেলাইট কী কী কাজে লাগাবে সেটা আলোচনার স্তরে আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের স্যাটেলাইট ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে আমাদের যে প্রচলিত চিন্তাভাবনা ছিল তার বাইরে এসব প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট ব্যবহারের চুক্তি করছে। আমরা স্যাটেলাইট এই কাজে ব্যবহার করবো সেই চিন্তাও করিনি।

যখন কিছু থাকে তখন তার প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে যায়। তাই এটি একটি আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক। আমাদের স্যাটেলাইট কোম্পানি সঠিকভাবে কাজ করছে। অর্থাৎ স্যাটেলাইট নিয়ে আমাদের এখন টেনশন, উদ্বেগ কোনোটাই নেই।

আমাদের স্যাটেলাইট ব্যবহারের জন্য এখন পর্যন্ত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি করেছে বলে আপনি বললেন আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির কথা হচ্ছে এর বাইরে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান স্যাটেলাইট ব্যবহারের আগ্রহ দেখিয়েছি কি?

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যে পরিকল্পনার বিষয়গুলো আছে সেগুলো অনেকটা নির্ভর করে, আমরা যখন অপারেশনে যাবো তখন তারা দেখবে পাবে এর কার্যকারিতা। তখন আসলে তারা এটা ব্যবহারের জন্য চুক্তি করবে। আমরা এখন অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিংয়ে যাইনি। কারণ আমাদের যেহেতু দুই মাসের কাছাকাছি সময় আছে সুতরাং আমাদের সেই কারণেই যেই মিটিংগুলো আমাদের সামনে আসছে, প্রস্তাবগুলো সামনে আসছে সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। আনন্দের বিষয় হচ্ছে আমরা তিনটা প্রতিষ্ঠানকে অ্যাপ্রোচ করেছি। তিনটাই সফল হয়েছি।

স্যাটেলাইট থেকে কি নিয়মিত সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে?

মোস্তাফা জব্বার: হ্যাঁ, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এটি কক্ষপথে পৌঁছে সিগন্যাল পাঠাতে শুরু করে। এটি নিয়মিত সিগন্যাল পাঠাচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্যাটেলাইটটি এখন আমরা বাংলাদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করছি। এটা নিয়ে আমাদের এখন চিন্তার কোনো জায়গা নেই।

বিশ্বের অনেক দেশেরই মহাকাশে একাধিক স্যাটেলাইট রয়েছে বিভিন্ন কাজে তারা বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের একমাত্র স্যাটেলাইট আমাদের সব চাহিদা মেটাতে পারবে?

মোস্তাফা জব্বার: এই বিষয় নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমিও বলেছি বহুবার। আমরা একটা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। সব সময় যেটি হয় সেটি হলো-আমাদের আরও একটি স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হবে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের এই একটি স্যাটেলাইটই আমাদের কাছে যথেষ্ট।

আমাদের আসলে আরেকটি স্যাটেলাইটে অংশীদারিত্ব আছে। যেমন সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট যেটি ইন্ডিয়া লঞ্চ করেছে সেখানে আমাদের একটি অংশীদারিত্ব রয়েছে। আমরা ওই স্যাটেলাইটের একটি অংশ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারি। ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য কাজ করি।

দ্বিতীয় স্যাটেলাইট তৈরি ও উৎক্ষেপণের ব্যয় নিশ্চয়ই অনেকটা কম হবে

মোস্তাফা জব্বার: আমাদের প্রথম স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের ফলে আমাদের দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের কাজ করাটা সহজ হবে। আমাদের ব্যয় কমে যাবে অনেক। সময় কমে যাবে অনেক।

বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটটি ছিল কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি কী ধরনের স্যাটেলাইট হবে?

মোস্তাফা জব্বার: বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটিও হবে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। আমাদের এই মুহূর্তে কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট ছাড়া অন্য কোনো স্যাটেলাইট আমাদের প্রয়োজন নেই।

বস্তুত পক্ষে যে অরবিটে আমাদের স্যাটেলাইটটি আছে সেই অরবিটেই আমরা আমাদের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট পাঠাবো।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কী ইন্টারনেটে ব্যবহারের সুবিধাও আছে? যদি থাকে তবে এই ইন্টারনেটের খরচ কি প্রচলিত ইন্টারনেটের চেয়ে বেশি হবে?

মোস্তাফা জব্বার: হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ব্যবহৃত ইন্টারনেটের খরচ বেশি হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ, আমরা দেশের ভেতরেও যদি দেখি কোনো জায়গায় কোনোভাবেই ইন্টারনেটে পৌঁছাতে পারছি না। যেখানে তার নিতে পারছি না। অথবা ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নিতে পারছি না। সেখানে আমি স্যাটেলাইট ইউজ করবো। সুতরাং এটাকে এক্সপেনসিভ হিসেবে দেখার বিষয় নেই। এখনকার দুনিয়াতে প্লেনে ওয়াইফাই ব্যবহৃত হচ্ছে। জাহাজেও ওয়াইফাই ব্যবহৃত হলেও সেটি অবাক হবারও বিষয় নেই।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে যেহেতু ডিটুএইচ সুবিধা আছে তাই আমরা আশা করতে পারি এর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হলে আমরা কম খরচে স্যাটেলাইট টেলিভিশন উপভোগ করতে পারবো

মোস্তাফা জব্বার: আমরা প্রত্যাশা করি যে, দুটো প্রতিষ্ঠান ডিটুএইচ সুবিধা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য লাইসেন্স পেয়েছে। তাই এই স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হলে প্রতিষ্ঠান দুটি নিশ্চয়ই ডিটুএইচ সুবিধা চালু করবে। এবং এই সেবা অনেক কম খরচে পাওয়া যাবে।

ঢাকাটাইমসকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

মোস্তাফা জব্বার: ঢাকাটাইমস এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/এজেড/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা