সুপ্রিম কোর্টকে আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি

ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করা সমীচীন হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ০০:০১ | প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:৫৮

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে স্থানান্তর না করতে সুপ্রিম কোর্টকে আবারও চিঠি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। পুরাতন হাইকোর্ট ভবন হতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করে ভবনটি সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে দখল স্থানান্তর করা সমীচীন হবে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এই ভবন থেকে সরিয়ে নিলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এবং সুপ্রিম কোর্ট দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

সিনিয়র সহকারী সচিব কাজী মুশফিক মাহবুব রবিন স্বাক্ষরিত চিঠিটি বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে সরিয়ে নিয়ে ওই ভবনটির ব্যবহৃত অংশ বুঝিয়ে দিতে সরকারকে ৩১ ডিসেম্বর সময় বেঁধে দিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর চিঠি পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই চিঠির জবাবে ট্রাইব্যুনাল না সরানোর কথা জানালো আইন মন্ত্রণালয়।

আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই ভবনে স্থাপিত ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরুর পর কুখ্যাত অনেক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যে কারণে এ ভবণটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ ঐতিহাসিক এই ভবনটির মর্যাদা সমুন্নত রেখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত থাকুক। অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ভবন থেকে সরালে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এবং সর্বজন গ্রাহ্য হবে না, বরং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

চিঠিতে আর বলা হয়, পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটি পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের গভর্নরের সরকারি বাসভভন হিসেবে নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে এই ভবনটি পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টে রুপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধ যেমন, যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারকাজ পরিচালনা করার জন্য বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় অন্য কোথাও যৌক্তিক ও নিরাপদ স্থাপনা না পাওয়াই সরকার পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে।

চিঠিতে জানানো হয়, ২০০৯ খ্রিস্ট্রাব্দ পযন্ত এই ভবনের একটি অংশে আইন কমিশন ও অপর অংশে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিস হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। আইন কমিশন ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ১৫, কলেজ রোড, ঢাকা ঠিাকানায় স্থানান্তর করে ওই ভবনটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়।

সকল বিষয় বিবেচনা পূর্বক পুরাতন হাইকোর্ট ভবন হতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করে ভবনটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে দখল হস্তান্তর করা সমীচিন হবে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে গত ১৮ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়কে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরে পদক্ষেপ নিতে চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে গত ৩০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দেয়া হয়। এর জবাবে সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়কে আবারো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে সরিয়ে নিয়ে ভবনটির দখল হস্তান্তর করার জন্য চিঠি পাঠায়।

সুপ্রিম কোর্ট থেকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ড রুমের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় রেকর্ড সুবিন্যস্তভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণকে অনেক ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্য কোনো পৃথক রেকর্ড রুম না থাকায় এ সংক্রান্ত সব মামলার নথি সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ড রুমে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। ফলে এক দিকে সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব মামলার নথি সংরক্ষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অন্য দিকে জায়গার অভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার নথি সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ড রুমে সংরক্ষণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের প্রায় ২৫০০ কর্মচারীর জন্য প্রয়োজনীয় অফিস কক্ষের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে একটি টেবিলে দুই বা ততোধিক কর্মচারীকে বসে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানের অপ্রতুলতার কারণে বিচারপতিদের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক চেম্বার/কোর্ট রুমের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।

আইন মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সুদীর্ঘকালের সুমহান ঐতিহ্য বহন করলেও স্থানাভাবে সুপ্রিম কোর্টের জন্য নিজস্ব কোনো পরিপূর্ণ জাদুঘর বা আর্কাইভ স্থাপন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য একটি মানসম্মত ডে-কেয়ার সেন্টার, বিচারপতিগণ, আইনজীবী ও কর্মচারীদের জন্য পরিপূর্ণ মেডিকেল সেন্টার স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও স্থান স্বল্পতার কারণে তা করা সম্ভব হচ্ছে না।

তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ও তাদের ব্যবহারের জন্য পুলিশ বাহিনী থেকে বারবার সুপ্রিম কোর্টে একটি পুলিশ ব্যারাক নির্মাণের জন্য স্থান বরাদ্দের তাগাদা সত্ত্বেও স্থান সঙ্কুলানের অভাবে তাদের জন্য কোনো স্থান বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়াসহ ছুটির দিনগুলোতে কোনো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সব এলাকা সমন্বিত করে উন্নয়নের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহৃত অংশ) দখল হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/এমএবি/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

জি কে শামীমের জামিন ঘিরে আবারও প্রতারণা, এক সপ্তাহ নিষিদ্ধ আইনজীবী 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে মামলা

ধর্ষণ মামলায় মুশতাক-ফাওজিয়ার স্থায়ী জামিন

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

টিপু-প্রীতি হত্যাকাণ্ড: আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু

বিডিনিউজ সম্পাদক খালিদীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল দুদকের

পরীমনির আবেদনে পেছাল মাদক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা: পিনাকী ভট্টাচার্যকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট, মুশফিককে অব্যাহতি

আগামী সপ্তাহ থেকে আপিল বিভাগে দুই বেঞ্চে বিচারকাজ চলবে

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :