তীব্র গরমে প্রশান্তি আনবে জাদুকরী ডিটক্স ওয়াটার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৫

তীব্র গরম ও তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। কোথাও যেন স্বস্তি মিলছে না। অধিকাংশরা আক্রান্ত হচ্ছেন ফুড পয়জনিং, ডায়েরিয়াসহ নানা রোগ ব্যাধিতে। এমন গরমে ঘাম বেশি না হলেও শরীরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। তবে সতর্ক থাকতে হবে যাতে শরীর পানিশূন্য হয়ে না পড়ে। পানিশূন্যতা সৃষ্টি হলে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় পড়বে তার প্রভাব। গরমে সুস্থ থাকতে ও প্রশান্তি পেতে প্রচুর পরিমাণে ফল, সবুজ শাক সবজি, শসা, ডাবের পানি তো খাবেনই, সেইসঙ্গে বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারেন কিছু উপকারী পানীয়। এতে শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ যেমন বাইরে বেরিয়ে আসবে তেমনই হার্ট, কিডনি এসবও ঠিকমতো কাজ করবে।

ঘরে বানানো নানারকম শরবত, আখের রসের উপরই জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে যেমন শরীরের ডিটক্সিফিকেশন হবে তেমনই বাড়বে রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি। আর গরমে যত হালকা খাবার খাবেন ততই সুস্থ থাকবেন। গরমে আরাম পেতে ঘরেই ঝটপট বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারেন লবণ-চিনি ও লেবুর শরবত। এছাড়া বেশি করে তরমুজ খেতে পারেন। এর জুস বানিয়েও পান করতে পারেন।

তবে তাপপ্রবাহের দিনগুলোতে নিয়মিত ডিটক্স ওয়াটার পান করা উচিত বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। কেননা ডিটক্স ওয়াটার শরীর থেকে সব বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরকে বিষমুক্ত করে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বাড়তি মেদ ঝরে। এমনকি খাবার হজমেও সাহায্য করে এ পানীয়।

বাড়িতে তৈরি করতে পারেন ডিটক্স ওয়াটার। এক লিটার পানিতে শসা, লেবু কেটে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর পুদিনা পাতা মিশিয়ে তা পান করতে পারেন। এছাড়া টকদই, লাস্যিও খেতে পারেন অনায়াসে।

ডিটক্স ওয়াটার শরীরের জন্য খুব ভাল। খুব বেশি ফাস্ট ফুড বা মিষ্টি খেলে, হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। সেক্ষেত্রে শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে ডিটক্স ওয়াটার পান করা উপকারী। দূষণ ধীরে ধীরে ফুসফুসের ক্ষতি করতে শুরু করে। ফলস্বরূপ ফুসফুসকে ডিটক্সিফাই করা খুবই জরুরি। তীব্র গরম হোক কিংবা উৎসবের মরসুম, কিছু ডিটক্স ওয়াটার খাওয়া শরীরের জন্যে ভাল।

ডিটক্স ওয়াটার হল এক ধরনের ইনফিউজড ওয়াটার, যেটাতে ফল, সবজি ও পানি মিশিয়ে তৈরি হয়। এই ধরনের পানীয়কে হার্বাল ডিঙ্কস বা ডিটক্স ওয়াটার বলে। এই ধরনের ড্রিঙ্ক ওজন কমাতে সহায়ক। পানিতে বিভিন্ন ভেষজ যোগ করার পরে, এর পটাসিয়ামের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, যা শরীর থেকে সোডিয়াম অপসারণ করতে সহায়তা করে।

এটা সকলের জানা যে, পানি পান করলে মেটাবলিজম বাড়ে। ডিটক্স ওয়াটারে মেটাবলিজম ভাল হয়। এতে শরীরের এনার্জি লেভেল বাড়ে। যারা নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলে যান, তারা অবশ্যই ডিটক্স পানি পান করুন। ডিটক্স ওয়াটার শরীরে ক্যালোরির পরিমাণ সমান করে। যা, শুধু ওজন কমায় না, মেটাবলিজমও শক্তিশালী করে। শুধু শরীর হাইড্রেটেড থাকে না, হজম প্রক্রিয়াও ঠিক থাকে। জানুন কী ধরনের ডিটক্স ওয়াটার আপনি রোজ খেতে পারেন।

লেবু ডিটক্স ওয়াটার

লেবু ডিটক্স ওয়াটার হজমশক্তি উন্নত করতে এবং ওজন কমানোর জন্য সেরা ঘরোয়া প্রতিকার। লেবু মানে ভিটামিন সি। লেবু ধুয়ে তিন থেকে চারটি পাতলা করে কেটে নিন। একটি কাচের পাত্রে পরিষ্কার জল ভরে তাতে এই টুকরোগুলি মিশিয়ে নিন। লেবুর টুকরো সহ দুই-তিনটি পুদিনা পাতা দিন। সারাদিন ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে এই জল পান করুন। এটি শরীরকে হালকা করে, ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দূর করে, ডায়েট করতে সাহায্য করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

ডাবের পানি, লেবু ও পুদিনা পাতার ডিটক্স ওয়াটার

লেবু ও পুদিনা পাতা দিয়ে আরেকটি রিফ্রেশিং ডিটক্স ড্রিংকস বানিয়ে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে অবশ্য সাধারণ পানির পরিবর্তে ডাবের পানি প্রয়োজন। আমাদের দেশে ডাব সব সময়ই পাওয়া যায়। এটি শরীরের পানির অভাব পূরণ করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে বেশ কার্যকরী। ডাবের পানি সঙ্গে সামান্য লেবুর রস ও পুদিনা পাতা কুঁচি দিলে তৈরি হবে দারুণ এক পানীয়। এই ডিটক্স ড্রিংকস আপনার হজমশক্তি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

জিরে-ধনে-মৌরির ডিটক্স ওয়াটার

ঘরোয়া এই ডিটক্স ওয়াটার বাঙালি পরিবারে বেশ জনপ্রিয়। কারণ এই পানীয় নিয়মিত খেলে পেট ঠান্ডা থাকবে, সেই সঙ্গে ত্বকের একাধিক সমস্যাও চলে আসবে নিয়ন্ত্রণে। এই উপকারী পানীয়টি বানাতে হলে পরিমাণমতো জলে এক চামচ গোটা জিরে, ধনে এবং মৌরী মেশান। এবার এই মিশ্রণ রেখে দিন সারা রাত। সকালে ঘুম থেকে উঠে জল ছেঁকে নিয়ে পান করলেই কেল্লাফতে!

লেবু-পুদিনার ডিটক্স ওয়াটার

খুব সহজেই লেবু আর পুদিনা পাতা দিয়ে ডিটক্স ড্রিংকস বানিয়ে নিন। এতে বাড়তি স্বাদ আনার জন্য কমলালেবু, শসা কুচি, আনারস ব্যবহার করতে পারেন। পুষ্টিবিদরা সাধারণত এটি সকালে পান করার পরামর্শ দেন। এতে শরীরের বাড়তি ওজন ঝরানো সহজ হবে। নরমাল পানিতে সব উপকরণ ত্রিশ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সেই পানি ছেঁকে নিলেই পেয়ে যাবেন ডিটক্স ওয়াটার। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে দিন শুরুর সবচেয়ে সহজ উপায় এটি।

তরমুজের ডিটক্স ওয়াটার

তরমুজের ডিটক্স ওয়াটার বানাতে প্রয়োজন ৬-৭ টুকরো তরমুজ, লেবুর রস এবং চাট মশলা। জুসারে তরমুজের টুকরো দিয়ে রস বের করে নিন। এবার সেই মিশ্রণে যোগ করুন লেবুর রস এবং চাট মশলা। আপনি চাইলে সামান্য জলও মেশাতে পারেন। তারপরে সেই পানীয় রেফ্রিজারেট করুন কয়েক ঘণ্টা। ফ্রিজ থেকে বের করে ঠান্ডা ঠান্ডা পান করলেই আরাম মিলবে ভরপুর।

শসার ডিটক্স ওয়াটার

শসার ডিটক্স ওয়াটারে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি পাওয়া যায়। এটি প্রস্তুত করতে, এক গ্লাস জলে কিছু শসার টুকরো রাখুন, এবার লেবুর রস, কালো লবণ এবং কিছু পুদিনা পাতা যোগ করুন, একটি চামচ দিয়ে মিশিয়ে পান করুন।

কমলা ডিটক্স ওয়াটার

কমলার ডিটক্স ওয়াটারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এটি শরীরের চর্বিকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে, তাই এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং ওজন কমায়। কমলালেবুর টুকরোগুলো পানিতে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখেই পান করতে পারেন। তাতেই মিলবে সব পুষ্টিগুণ।

গাজর ডিটক্স ওয়াটার

গাজরে থাকে বিটা ক্যারোটিন। আমাদের শরীর এই ক্যারোটিনকে ভিটামিনে রূপান্তরিত করে। এই উপাদান চোখ ভাল রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর। ভিটামিন এ শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দিতে সাহায্য করে। তাই সকালে এক কাপ গাজরের রস পান করতে পারেন সকাল সকাল।

মেথি ডিটক্স ওয়াটার

মেথির গুণের শেষ নেই। ডায়াবিটিসের মতো ঘাতক অসুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে মেথি। এমনকী এই প্রাকৃতিক উপাদানের গুণে ওজন কমে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত মেথি খেতে হবে। আর এক্ষেত্রে মেথি জলপান করতে পারলেই সবথেকে বেশি উপকার মিলবে। একগ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিন। তারপর সকালে উঠে সেই পানি পান করুন। এতেই দেখবেন উপকার মিলবে। বেরিয়ে যাবে শরীরে উপস্থিত সব বিষ!

আপেল ডিটক্স ওয়াটার

প্রতিদিন একটি আপেল খেলে রোগ-ব্যাধি দূরে থাকে। প্রয়োজন পড়ে না চিকিৎসকের। আপেলে থাকা ফাইবার স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আপেলে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের উপস্থিতির কারণে কোষগুলো থেকে ক্ষতিকর পদার্থ সহজেই নির্গত হয়। বিটের মতো আপেল দিয়েও একই রকমের পানীয় তৈরি করে ফেলতে পারেন। তবে ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে একটি সামলে খেতে হবে আপেলের তৈরি পানীয়।

দারুচিনি ডিটক্স ওয়াটার

ডায়েটিশিয়ানরাও ডিটক্স ওয়াটারে এক টুকরো দারুচিনি যোগ করার পরামর্শ দেন। দারুচিনি ও আদার ডিটক্স ওয়াটার শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে, প্রদাহ দূর করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও দারুচিনি রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে।

শসা, লেবু, পুদিনা পাতা কিংবা যেকোনো ফল দিয়ে বানানো ডিটক্স ওয়াটার স্টিল কিংবা কাঁচের জারে বানাবেন। প্লাস্টিকের জারে না বানানোই ভালো। ডিটক্স ওয়াটার একসঙ্গে অনেক পরিমাণে না পান করে অল্প অল্প করে সারাদিন পান করুন। বানানোর পর ডিটক্স ওয়াটার ফ্রিজে রেখে দিন। নয়তো বেশিক্ষণ বাইরে রাখলে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/৩০ এপ্রিল/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :