যুদ্ধবিরতি চুক্তি না হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রাফাহতে আক্রমণ চালাবে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৮ | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:২৫

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে ইসরায়েল এবং হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা করছে মিশর। তবে এবারও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো চুক্তি না হলে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের শেষ আশ্রয়স্থল রাফাহ শহরে আক্রমণ করবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

মঙ্গলবার ইসরায়েলি সামরিক সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হার্জি হালেভি মধ্য গাজা উপত্যকায় বেসামরিক লোকদের স্থানান্তরের পরিকল্পনার সাথে রাফাহতে একটি সামরিক আক্রমণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক এবং সৈন্যরা গাজা সীমান্তের কাছে সারিবদ্ধ রয়েছে এবং আক্রমণ শুরু করার জন্য সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো বা রাফাহ আক্রমণ শুরু করার ক্ষেত্রে পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সোমবার ইসরায়েলি মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার বিষয়ে মিশরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে একটি ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল মিশরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

মিশরও সোমবার নিশ্চিত করেছে যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য একটি নতুন প্রস্তাব রয়েছে।

সৌদি আরবে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক বৈঠকে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি বলেছেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য একটি প্রস্তাব টেবিলে রয়েছে।’

এদিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলেছে, তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল শনিবার তাতে আনুষ্ঠানিক সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল। এ বিষয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করে হামাসের পক্ষ থেকে উত্তর দেওয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন গোষ্ঠীটির উপপ্রধান খলিল আল-হাইয়া।

শনিবার প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, যিনি বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছেন-‘গত ১৩ এপ্রিল মিশরীয় এবং কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হামাসের উপস্থাপিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইহুদিবাদী দখলদারিত্ব।’

এদিকে একটি মিশরীয় প্রতিনিধিদল শুক্রবার ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য ইসরায়েল সফর করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মিশরীয় কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের কাছে নতুন কোনো প্রস্তাব নেই, যদিও তারা সীমিত যুদ্ধবিরতি বিবেচনা করতে ইচ্ছুক, বিনিময়ে হামাস ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে, যেখানে পূর্বের আলোচনায় ৪০ জিম্মির মুক্তির দাবি করেছিল ইসরায়েল।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ১৭টি দেশ গাজা যুদ্ধ শেষ করার পথ হিসেবে হামাসের কাছে তাদের জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল।

যদিও হামাস আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তবে শুক্রবার জারি করা একটি বিবৃতিতে এটি বলেছে, ‘আমাদের জনগণের চাহিদা এবং অধিকারকে বিবেচনা করে এমন কোনো ধারণা বা প্রস্তাবের জন্য উন্মুক্ত।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে কাতার, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় একটি বন্দিবিনিময় চুক্তি এবং যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ একাধিক বিশ্ব নেতা দাবি করেছিলেন রমজান মাস শুরুর আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে। তবে রমজান শেষ হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো অনিশ্চিত।

এদিকে গত মাসের শেষের দিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠক করেছেন ইসরায়েল, কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। সেই বৈঠক শেষে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস এবং ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মিশর ও কাতারের কর্মকর্তারা।

সেই বৈঠকেই হামাসকে ৪০ দিন যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ কাতার ও মিশর। তবে কয়েক দফায় বৈঠক হলেও কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েল। এতে কোনো ফলাফল ছাড়াই যুদ্ধবিরতির আলোচনা শেষ হয়েছে।

মূলত গাজায় ২য় বার যুদ্ধবিরতির জন্য একাধিক বার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে হামাস এবং ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার কাছে। কিন্তু প্রতিটি প্রস্তাবে হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। আর হামাসের এই দাবির কারণে কোনো প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি ইসরায়েল। ফলে আটকে আছে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। চার মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১৩৪ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।

সূত্র: আনাদোলু

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

ইরানে ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, মঙ্গলবার রাইসিসহ নিহতদের দাফন

বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন যেসব বিশ্ব নেতা 

ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাঘেরি কানি

ইব্রাহিম রাইসি: বিচারক থেকে প্রেসিডেন্ট

প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার

প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সব আরোহীর মৃত্যু নিশ্চিত করল ইরান  

ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি

ইরানের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ সব আরোহী নিহত: রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম

প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষে প্রাণের কোনো চিহ্ন নেই

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :