নিয়াজ জামানের বাংলা একাডেমি পুরস্কার বাতিল হোক

মানিক মেসবাহ
 | প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:২১

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু এখন অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত, স্বীকৃত। তিনি এখন আর কোনো পরিবার, প্রতিষ্ঠান কিংবা দলের বিষয় নন। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফলে এখন যখন তিনি ব্যাপকতর প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তখন এবং আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন একটি প্রায়-রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুরস্কৃত করেছে এমন এক ব্যক্তিকে যিনি প্রায়-ধারাবাহিকভাবে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ-বিরোধী মনো্ভাব পোষণ এবং প্রচার করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের মতো প্রসঙ্গে এই ব্যক্তি ১৯৯৬ সালের একটি লেখায় বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন ভুজঙ্গ ও সাপ: ‘Fearing what might happen if any one of the family were left alive, the Bengali Majors did what the Pakistani’s had not; destroyed the serpent and his eggs- except for two daughters who were out of the country.’

এ সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় নাকি আরো খবর রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস হতে চায় না। তবে সব সম্ভবের এ-দেশে এমন মনোভাব যেমন খুব বিরল নয়, আমরা এ রকম সব ক্ষেত্রে তদন্ত বা শাস্তির কথা ভাবি না, বলি না। কিন্তু, তার অর্থ কোনোক্রমেই এও নয় যে জেনেশুনে এমন একজনকে পুরস্কৃত করতে হবে।

পুরস্কৃত ব্যক্তির ভূমিকা ও মানস গড়নের খবর ব্যাপকভবে আলোচিত ছিল। আমরা এমন ব্যক্তিকে জানি যিনি বাংলা একাডে্মির এখনকার শীর্ষ ব্যক্তিকে অধ্যাপক নিয়াজ জামান সম্পর্কে তথ্যাদি জানিয়েছিলেন বহু আগে। জনাব খান বিশ্বাস করেননি। সহাস্যে সে অবিশ্বাস ব্যক্তও করেছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হওয়ার পরও বাংলা একাডেমিতে অধ্যাপক নিয়াজ জামানকে পদকটি প্রদানের ব্যবস্থা চলছিল।

এটি গ্রহণ করতে যাতে এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে অধ্যাপক জামান না আসেন, তা শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই বাংলা একাডেমিকে নিশ্চিত করতে বলা হয় বলে জানা যায়। যা-ই হোক, অত্যন্ত দুঃখজনক এই ঘটনার জন্যে এখন পর্যন্ত জনাব শামসুজ্জামান খান সাহেব কোনো মনোবেদনা প্রকাশ করেছেন বলে আমরা জানি না। ইতোমধ্যে এবং এতদসত্ত্বেও তিনি বরং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ হাসিল করেছেন। তাকে দেখি সুযোগ পেলেই বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, আগামীতেও পড়বেন। কিন্তু, সে সুযোগ কি তার পাওয়া উচিৎ?

বঙ্গবন্ধু কি তা হলে কয়েকজন ব্যক্তিরই বিষয়? তাঁরাই তাকে আগলে রাখবেন, না-রাখলে, নয়? বঙ্গবন্ধু কি এখনও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃত, এর প্রতীক ব্যক্তিত্ব? এসব প্রশ্নের কিছু সদুত্তর আমরা আশা করি। সবশেষে আরও একটি এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা। অধ্যাপক নিয়াজ জামান যখন ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকে ভুজঙ্গ বলেন, তখনও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাকে অবমাননা-বিষয়ে কোনো আইন প্রণীত হয়নি। সেদিক থেকে একটি আইনি রেহাই হয়তো তিনি পেতে পারেন। তবে, নৈতিক/সামাজিক মওকুফ নয়। সে কারণেই তার পুরস্কারটি বাতিল হওয়া দরকার।

আর যারা আজ এসে জেনেশুনে তাকে বাংলা একাডেমি পদকের জন্যে সুপারিশ করেছেন, যারা সে সুপারিশ গ্রহণ করেছেন, শেষ পর্যন্তও তার পদক-গ্রহণের আয়োজন করছিলেন, তারা এই কাজ ১৯৯৬ সালে করেননি। তারা কাজগুলো করেছেন ২০১৭ সালে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাকে অবমাননার শাস্তি থেকে কি তারা রেহাই পেতে পারেন? এর নৈতিক-সামাজিক দায় থেকে?

লেখক: স্বত্ত্বাধিকারী, অঙ্কুর প্রকাশনী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :