লালমনিরহাটে থামছে না কৃষকের বোবা কান্না

এস কে সাহেদ, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ১২ মে ২০১৭, ১১:৪৪
অ- অ+

পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। আবাদি জমি রয়েছে মাত্র দেড় বিঘা। বর্ষা মৌসুমে সেই জমি তলিয়ে থাকে পানিতে। এজন্য বোরো ধানই তার পরিবারের একমাত্র সম্বল। প্রতিবছর বোরো মৌসুমে পাওয়া ২৬ থেকে ২৭ মণ ধান দিয়েই চালের চাহিদা মেটাতে হতো। কিন্তু এবার ধানে নেক ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় সেই জমিতে ধান হয়েছে মাত্র সাড়ে নয় মণ। এই ধান দিয়ে চার মাস চললেও বছরের বাকি দিনগুলো কিভাবে যাবে এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক হেলাল মিয়া।

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ রোগ আসি আমার সব ধান নষ্ট করি দিল। অনেক ধার দেনা করি ধানের আবাদ করছিনো। দেনা কেমনে মেটাই আর সারাবছর কী খায়া বাচমু তা নিয়ে টেনশনে আছি।’ এ সময় তার চোখের পানি গাল বেয়ে পাকা দাঁড়িতে গড়িয়ে পরছিল।

শুধু হেলালই নন, এমন বোবা কান্না এখন অনেক কৃষকের মাঝে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সারা বছর পরিবার-পরিজন নিয়ে কি খাবেন এমন ভবনা এখন তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

একই এলাকার কৃষক আখতার আলী বলেন, কীটনাশক প্রয়োগের আগেই জমির ধান সাবাড় হয়ে গেছে। বিষ প্রয়োগ করেও লাভ হয়নি। দুই বিঘা জমিতে যেখানে কমপক্ষে ৪৫ মণ ধান হওয়ার কথা, সেখানে ধান পেয়েছি মাত্র ১৮ মণ।

জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের সর্বত্রই পুরো দমে ধান কাটা মৌসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে কাঙ্খিত ফলন না পেয়ে দিশেহারা প্রান্তিক কৃষকরা। যদিও আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেছে কিন্তু প্রতিকার পায়নি কৃষকরা। এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ২০ মণ ধানের পরিবর্তনে মাত্র ৭ থেকে ৮ মণ ধান পেয়ে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআর-২৮ জাতের ধানে নেক ব্লাস্ট রোগে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। আপাতত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে, গাছে ধান পেকে গেছে। কিন্তু শীষে আসলে ধানই নেই। সাদা ধানের শীষে চালের পরিবর্তে মিলছে পাতান (চিটা)। মাঠের পর মাঠের একরের পর একর জমির ধান ক্ষেত নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।

ধানের শীষ বের হওয়ার ৫-৭ দিনের মাথায় এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে জমির ধান শীষ শুকিয়ে পাকিয়ে যাওয়ার রং ধারণ করছে। এ রোগ আক্রান্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জমির ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। যেসব কৃষক অন্যের জমি ইজারা নিয়ে কিংবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছেন, বাকিতে দোকান থেকে সার ও কীটনাশক কিনে জমিতে প্রয়োগ করেছেন তারা পড়েছেন মহাবিপাকে।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিদূভূষণ রায় বলেন, নেক ব্লাস্ট একটি ছাত্রাক জাতীয় রোগ। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে বোরো ধানক্ষেতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জমিতে ধান শীষ বের হওয়ার চারদিন পর পর কমপক্ষে তিন বার বিষ প্রয়োগের পরামর্শও দেন তিনি।

ঢাকাটাইমস/১২মে/প্রতিনিধি/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঈদযাত্রায় পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে: শিমুল বিশ্বাস 
রূপগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১
রূপগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে অটোরিকশা চালক নিহত, আহত ৩০
মৌলভীবাজারে দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাসী হামলায় সাংবাদিক আহত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা