বাংলাদেশকে একদিন পরিচ্ছন্ন করবোই

'পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন’ বুকে ধারণ করা তারুণ্যনির্ভর স্বেচ্ছাসেবী প্লাটফর্ম ‘বিডি ক্লিন’। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার মানসিকতা পরিবর্তন এবং পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক নাগরিক সচেতনতা বাড়ানোই সংগঠনটির মূল লক্ষ্য। পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সবার সহযোগিতা ও ভালোবাসা নিয়ে বিডি ক্লিন ইতিমধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করে চলেছে। দেশব্যাপী সকল মানুষের মাঝে পরিচ্ছন্নতার এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতেই বিডি ক্লিনের অদম্য ছুটে চলা।
এই অভিযাত্রার উদ্যোক্তা ফরিদ উদ্দিন মিলন। ঢাকাটাইমসের সঙ্গে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের পেছনের কথা, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক বোরহান উদ্দিন।
ঢাকাটাইমস: বিডি ক্লিনের শুরুর কথা একটু শুনি।
ফরিদ উদ্দিন: একটা ছবি (ডাস্টবিন খালি কিন্তু নীচে ও চারপাশে ময়লার স্তুপ) দেখেই আমার মাথায় চিন্তাটি আসে কীভাবে আমাদের চারপাশ পরিষ্কার রাখতে পারি। এরপর ২৪ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে যাত্রা শুরু করি ‘ঢাকা ক্লিন’ নামে। আস্তে আস্তে স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। শুরুর দিকে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার রাত ১১ টা থেকে ভোর পর্যন্ত শহরের একটি জায়গা নির্ধারণ করে সেটি পরিষ্কার করি। পরবর্তীতে এখন প্রতি শুক্রবার বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত চলে পরিষ্কার অভিযান, সেই সাথে মাইকিং করে আশপাশের জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করতে থাকি। এভাবেই শুরু। এখন তো চলছে...।
ঢাকাটাইমস: কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
ফরিদ উদ্দিন: অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি গত ১ বছরে। ২৪ জন থেকে ধীরে ধীরে আজ ছয় হাজারের বেশি সদস্য বিডি ক্লিনে। এতেই তো বোঝা যায় কী পরিমাণ সাড়া পাচ্ছি। আমাদের বিশ্বাস, একদিন প্রত্যেকটি মানুষকে আমরা সচেতন করতে পারব এবং তার মধ্য দিয়ে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশও গড়ে উঠবে। আর একটি বিষয়- প্রত্যেক নাগরিকেরই তো দায়িত্ব নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, চারপাশ পরিষ্কার রাখা।
ঢাকাটাইমস: কাদের কাছ থেকে বেশি সাড়া পাচ্ছেন?
ফরিদ উদ্দিন: সবাই আমাদের উৎসাহ দিলেও বেশি সাড়া পাচ্ছি তরুণদের কাছ থেকে। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষও যোগ দিয়েছেন আমাদের সঙ্গে। ফেসবুকে ইভেন্ট দেখে নিজেরাই এগিয়ে আসছেন এবং নিজ হাতে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। দেখে সত্যি গর্বে বুকটা ভরে যায়। আর সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণেই ‘ঢাকা ক্লিন’ থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলায় টিম তৈরি হচ্ছে। তাই ঢাকা ক্লিন নাম বদলে এটির নাম করা হয় বিডি ক্লিন। আমরা সারা দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই।
ঢাকাটাইমস: কীভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন?
ফরিদ উদ্দিন: আমাদের এই প্লাটফর্ম পুরোপুরিভাবে ভলান্টিয়ার্সদের অর্থায়নে পরিচালিত। বাইরে থেকে কোনো আর্থিক অনুদান বা সাহায্য নেয়া হয়নি এখনো। আমাদের একটাই স্বপ্ন- দেশকে পরিচ্ছন্ন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কোনকিছুই আমাদের থামিয়ে রাখতে পারেনি। আমরা মানুষকে যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনা না ফেলতে, ডাস্টবিন ব্যবহার করতে সচেতন করি। আমরা মনে করি মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারলেই আমাদের এই পরিচ্ছন্ন রাখার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।
আমাদের সামনে একটা মিশন আছে। যার নাম ‘মিশন ৬৪’। দেশের ৬৪ জেলাতেই থাকবে বিডি ক্লিনের আলাদা টিম। ৬৪ জেলাতে বিডি ক্লিন জেলা শাখা তৈরী করার পর ২০১৮ সালে থানা পর্যায় ও ২০১৯ সালে গ্রাম পর্যায়ে টানা তিন বছর প্রতি শুক্রবার চলবে পরিচ্ছন্নতার কাজ। এভাবেই আমরা ২০২০ সালের মধ্যে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পুরোপুরি সফল হব বলে আশা রাখি।
বর্তমানে নিয়মিত কার্য্যক্রমের বাইরেও আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের মর্যাদা রক্ষার্থে সপ্তাহে সাত দিনই বেলা চারটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। মিনারের বেদিতে জুতা নিয়ে না ওঠা এবং শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ময়লা না ফেলার ব্যাপারে সচেতন করা হয় এখানে ঘুরতে আসা সকল মানুষকে।
ঢাকাটাইমস: কাজ করতে গিয়ে কেমন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন?
ফরিদ উদ্দিন: এই কাজে আমাদের বড় কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। বরং উৎসাহ পেয়েছি। কারণ আপনি নিজে অসচেতনতার কারণে হয়তো রাস্তার ওপর, বাড়ির পাশে ময়লা ফেলছেন। কিন্তু তা কেউ পরিষ্কার করছে দেখলে তো খুশি হবেন, তাই না। আমাদের বেলাও তা-ই হয়েছে। তবে যারা আমাদের সঙ্গে প্রথম এই কাজে যুক্ত হয়েছেন তাদের কেউ কেউ কিছুটা সংকোচ করলেও ধীরে ধীরে তা পুরোপুরিভাবে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।
ঢাকাটাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ। বিডি ক্লিনের জন্য শুভকামনা।
ফরিদ উদ্দিন: আপনাকেও ধন্যবাদ। ঢাকাটাইমসের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
(ঢাকাটাইমস/৭আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন