মিথ্যা কথা বলা আমার অভ্যাসে নেই: আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:৪২ | প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:০৩

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজেই তার অসুস্থতার কথা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছিলেন বলে জোর দিয়ে বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, মিথ্যা বলার অভ্যাস তার নাই। প্রধান বিচারপতির অসুস্থতার বিষয়ে তার বক্তব্য নিয়ে যারা মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছেন, তাদেরকে অর্বাচীনও বলেন মন্ত্রী। বিমানবন্দরে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে হতভম্ভ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন আনিসুল হক।

রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। গত শুক্রবার রাতে এক মাসের ছুটিতে চার দেশে যান প্রধান বিচারপতি। আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন অসুস্থতার কথা বলে এক মাসের ছুটি চেয়েছিলেন সিনহা। কিন্তু বিদায় বেলায় তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। এই পরিস্থিতিতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন আইনমন্ত্রী।

সাংবাদিকরা আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, তাহলে কোন বক্তব্যটা সঠিক। পাশাপাশি ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান বিচারপতির লেখা চিঠির সত্যতা নিয়ে উঠা প্রশ্নও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি সেই চিঠি গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেছি। সেই চিঠি এবং তাঁর বক্তব্য মিথ্যা নয়। যারা সেটিকে মিথ্যা বলতে চাইছে, সেসব অর্বাচীনকে আমি বলব, মিথ্যা কথা বলা আমার পেশা নয়, অভ্যাসও নেই। আমার বাবাও কখনও আইন পেশায় খারাপ মামলায়ও মিথ্যা বলেননি। আমিও বলি না।'

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটিতে যাওয়া সম্পর্কিত তিনটি চিঠি পড়ে শোনান আইনমন্ত্রী।

গত ২ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা এক চিঠিতে প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, ‘আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি বেশ কিছুদিন যাবত নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগছি। আমি ইতিপূর্বে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন ছিলাম। বর্তমানে আমি বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছি। আমার শারীরিক সুস্থতার জন্য বিশ্রামের একান্ত প্রয়োজন।’

প্রধান বিচারপতি ছুটির ইচ্ছা জানানোর পর ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত তার ছুটি অনুমোদন করেছেন রাষ্ট্রপতি। পরে তা ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আর শুক্রবার রাতে প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। এই দেশটি ছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা যাবেন এবং ১০ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারি দলের নেতাদের নানা বক্তব্যের পর প্রধান বিচারপতির হঠাৎ ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনার জন্ম হয়। আর আইনমন্ত্রীই প্রথম জানিয়েছিলে, প্রধান বিচারপতি কেন ছুটি চেয়েছেন।

এ নিয়ে নতুন বিতর্ক উঠে শুক্রবার বিদেশ যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতির নতুন বক্তব্যে। তিনি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদেরকে যা বলেন, তা তার এই চিঠির পুরো উল্টো। তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। আমি ভালো আছি।’ সিনহা আরও বলেন, ‘আমি পালিয়ে যাচ্ছি না, আমি আবার ফিরে আসবো। আমি কিছুটা বিব্রত।’ পরে নিজের বক্তব্যের একটি লিখিত কপিও সাংবাদিকদের দেখান প্রধান বিচারপতি।

আইনমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যখন প্রধান বিচারপতি তার সরকারি বাসভবন ত্যাগ করেন তখন কাউকে অ্যাড্রেস না করে একটি চিঠিতে জানিয়েছেন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। আমি তার বক্তব্যে হতভম্ভ। রাষ্ট্রপতিকে লিখেছেন তিনি অসুস্থ, অথচ সাতদিন পরে বলছেন সুস্থ। আসলে যখন প্রথমে বললেন, তখনই ডাক্তারি পরীক্ষা করা দরকার ছিল, কিন্তু তা হয় নাই।’

প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে বিতর্কের কোনো ‘অবকাশ নেই’ জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি ছুটি নিয়ে ব্যক্তিগত সফরে বিদেশে গেছেন। রাষ্ট্রপতি তার অনুপস্থিতিতে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দিয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো ‘অবকাশ নেই’।

আনিসুল হক বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক মহল কোনো ইস্যু না পেয়ে খড়কুটো দিয়ে বিতর্ক তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যারা এ নিয়ে বিতর্ক করছে, তাদের একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। সেটা হাসিল হয়নি বলেই তাদের এই মায়াকান্না।’

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিবের লেখা চিঠির বরাত দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন- রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা এক চিঠিতে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন দীর্ঘদিন বিচারকার্জ পরিচালনা করায় ও অবসরের সময় ঘনিয়ে আসায় তিনি মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এই অবসাদ দূর করার জন্য তার বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন। তার এই চিঠির আলোকেই সরকার প্রধান বিচারপতিকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়।’

‘তার প্রত্যেকটি চিঠি স্পষ্ট এবং এগুলো আমাদের কাছে আছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।’

অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে লিখিত চিঠিতে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিন মাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংবিধানের ৯৭ ধারা উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, ‘আমাকে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য আইনসংগত নয়।’ অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিক পরিবর্তন আনতে পারবেন।

ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/এমএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

জি কে শামীমের জামিন ঘিরে আবারও প্রতারণা, এক সপ্তাহ নিষিদ্ধ আইনজীবী 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে মামলা

ধর্ষণ মামলায় মুশতাক-ফাওজিয়ার স্থায়ী জামিন

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

টিপু-প্রীতি হত্যাকাণ্ড: আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু

বিডিনিউজ সম্পাদক খালিদীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল দুদকের

পরীমনির আবেদনে পেছাল মাদক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা: পিনাকী ভট্টাচার্যকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট, মুশফিককে অব্যাহতি

আগামী সপ্তাহ থেকে আপিল বিভাগে দুই বেঞ্চে বিচারকাজ চলবে

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :