‘লাভ জিহাদ’ বিষয়ে তরুণীর বক্তব্য শুনবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর ২০১৭, ২০:১৬| আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০১৭, ২০:২০
অ- অ+

ভারতে হিন্দু মেয়েরা যখন ধর্মান্তরিত হয়ে কোনও মুসলিম যুবককে বিয়ে করেন, তখন একটি মহল একে বর্ণনা করেন 'লাভ জিহাদ' বলে। কিন্তু আদালতের এক নির্দেশের পর সেই বিতর্ক এক নতুন মোড় নিয়েছে। খবর বিবিসির।

কেরালার মেয়ে আখিলা হাদিয়া সত্যিই স্বেচ্ছায় ভালোবেসে শেফিন জাহানকে বিয়ে করেছিলেন, না কি তাকে জোর করে কিংবা মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে এই বিয়েতে রাজি করানো হয়েছিল - সেটা জানতে দেশের সুপ্রিম কোর্ট নভেম্বর মাসে তাকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছে।

এর আগে কেরালা হাইকোর্ট হাদিয়ার বিয়েকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল, কিন্তু এখন দেশের শীর্ষ আদালত মেয়েটির নিজের মুখ থেকে তার বক্তব্য শুনতে চান।

এদিকে 'প্রেমের ফাঁদ পেতে হিন্দু মেয়েদের কব্জা করতে কোনও ইসলামি চক্রান্ত' সত্যিই কাজ করছে কি না, তা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়াতেও তুলকালাম চলছে।

২৪ বছর বয়সী আখিলা হাদিয়া কীভাবে ইসলামে ধর্মান্তরিত হলেন, তা নিয়ে আদালতের নির্দেশেই তদন্ত চালাচ্ছে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)।

তারা সোমবার সুপ্রিম কোর্টে জানায়, এটি একটি 'সাইকোলজিক্যাল কিডন্যাপিং' বা 'মনস্তাত্ত্বিক অপহরণের' কেস - কারণ আখিলার স্বামী শেফিন জাহান একজন দাগী অপরাধী, তার নামে দুটো ফৌজদারি মামলাও আছে।

প্রধান বিচারপতি তখন পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ভারতের কোন আইনে বলা আছে যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী কোনও অপরাধীর প্রেমে পড়তে পারবে না বা তাকে বিয়ে করতে পারবে না?

এনআইএ-র মুখপাত্র অবশ্য জানিয়েছেন, তারা এরপরেও তদন্ত চালিয়ে যাবেন। কিন্তু আখিলার মানসিক অবস্থা ঠিক নেই বলে তাকে আদালতে হাজির করানো সমীচিন হবে না - তাদের এই যুক্তি সুপ্রিম কোর্ট মানেননি।

ফলে ২৭ নভেম্বর আখিলা হাদিয়াকে দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে হাজির করাতে বলা হয়েছে।

মাসদুয়েক আগে কেরালার এক অ্যাক্টিভিস্টের তোলা এক ভিডিওতে হাদিয়াকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘এভাবে আর কতদিন?’ বাড়িতে তাকে মা নামাজ অবধি পড়তে দেন না, সেই অভিযোগও করেছিল সে।

আখিলার বিয়ে হাইকোর্ট ভেঙে দেয়ার পর গত কয়েকমাস ধরে তিনি বাবা-মার কাছেই আছেন- এদিকে তার বিয়ের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে কেরালা তথা সারা দেশ জুড়ে।

বিভিন্ন চ্যানেলে বলা হচ্ছে, সংগঠিত চক্র ভারতের তরুণীদের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করছে এটা প্রমাণিত - এবং হাদিয়ার ঘটনাটিও এই 'লাভ জিহাদের'ই একটি দৃষ্টান্ত।

কোনও কোনেও চ্যানেল আবার ব্যবহার করছে 'ইমোশনাল হ্যাকিং' শব্দটি - যার অর্থ হল আবেগের অস্ত্র ব্যবহার করে এই তরুণীদের মস্তিষ্কের হার্ডওয়্যার হ্যাক করা হচ্ছে।

কিন্তু আখিলা হাদিয়ার বিয়েকে নাকচ করার কোনও আইনি অধিকার তাদের বাবা-মার নেই বলেই মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গীতা লুথরা।

তার যুক্তি, ‘সাবালক একজন সন্তানের ওপর বাবা-মা তাদের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারেন না। হাদিয়া একজন প্রাপ্তবয়স্ক, তাই তার বাবা-মা আদালতে গিয়ে বলতে পারেন না তার বিয়ে ভেঙে দাও - এখানে শুধু স্বামী-স্ত্রী এই দুজনের কথাই বিবেচ্য।’

কেরালার অ্যাক্টিভিস্ট রাহুল ইসওয়ার, যিনি কিছুদিন আগে আখিলার সঙ্গে দেখা করেছেন, তার সহানুভূতিও মেয়েটির দিকেই।

ইসওয়ার বলছেন, ‘আখিলা হাদিয়ার জটিল আইনি মামলাটি কেরালায় হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের রাস্তা করে দিচ্ছে - সেটা ঠিকই। পাশাপাশি এটাও বলব, স্বামী হিসেবে সে যাকে পছন্দ করেছে তাকে আমার খুব খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু দেশের সংবিধানই কিন্তু আখিলাকে নিজের ইচ্ছামতো এই সঙ্গী নির্বাচনের অধিকার দিয়েছে।’

ভারতের লাভ জিহাদ বিতর্ক অবশ্য এই যুক্তিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে না। চার সপ্তাহ বাদে আখিলা হাদিয়া যখন নিজের কাহিনি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে এসে হাজির হবে, বরং তখন তা আরও একপ্রস্ত ইন্ধন পাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/এসআই)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নিজের নামে সর্বোচ্চ ১০টি সিম কেনা যাবে, জানালো বিটিআরসি
বনানীতে ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
কসবা সীমন্তে বিএসএফের গুলি, আহত দুই বাংলাদেশি
কানে বিশেষ স্বীকৃতি পেলো আদনান আল রাজীবের ‘আলী’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা