সিওপিডি মৃত্যুর চতুর্থ কারণ ভবিষ্যতে হবে তৃতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ২০:১৮

শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমানারি ডিজিজ বা সিওপিডি একটি প্রাণঘাতী অসুখ, যা ধূমপায়ীদের বেশি হতে দেখা যায়। এটা ফুসফুসের অসুখ যাতে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সিওপিডির ফলে কাশি দেখা দেয়, সেই সঙ্গে কফ, নিঃশ্বাসে সাঁ সাঁ শব্দসহ নানা উপসর্গ থাকে। পরিণামে অনেকে মারা যান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে সিওপিডি রোগীর সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ। যারা ধূমপান করেন, তাদের মধ্যে এই সংখ্যা ১২ শতাংশ। আর অধূমপায়ীদের মধ্যে এই সংখ্যা ৩ শতাংশ।

এক পরিসংখ্যান মতে, ২০০৫ সালে তিন মিলিয়ন লোক এই রোগে রোগে মারা গেছেন। ২০০২ সালে সেখানে সিওপিডি রোগ মৃত্যুর পঞ্চম কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল, এখন তা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে তা তৃতীয় মৃত্যুর কারণ হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বক্ষব্যাধি বিভাগ পরিচালিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীর ৩৫ বছরের উর্ধ্বের জনসংখ্যার ১১.৪ শতাংশ সিওপিডি রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ১১.৭ শতাংশ পুরুষ ও ১০.৬ ভাগ শতাংশ।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব সিওপিডি দিবস পালিত হয়েছে বুধবার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শেষে আলোচনা সভা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, ধূমপান পরিহার ও পরিবেশ দূষণ রোধের মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে নারী ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে-এটাও প্রতিরোধ করতে হবে। সিওপিডি রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ধূপমান নিরাময় কেন্দ্র, এনসিডি (নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস) কর্নার, পালমোনারি রিহ্যাবিলেটশন সেন্টার (ফুসফুসের রোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র), রেসপিরেটরি আইসিইউ, রেসপিরেটরি ইমাজেন্সি প্রতিষ্ঠা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, সিওপিডি রোগ প্রতিরোধে তামাকের চাষ ও উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সিগারেট ও তামাক কোম্পানিগুলো বন্ধ হলে হ্রাস পাবে সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ও অনেকটাই কমে আসবে। কারণ, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার।

শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, সিওপিডি রোগীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার যাতে মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে থাকে সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে। বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে পালমোনারি রিহ্যাবিলেটশন সেন্টার (ফুসফুসের রোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র), রেসপিরেটরি আইসিইউ, রেসপিরেটরি ইমাজেন্সি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে। বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম সিওপিডি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসা এবং বস্তিসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়ার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘ধূমপানের সঙ্গে এই অসুখটি যুক্ত। যাদের এটা হয়, তাদের অনেকেই ধূমপান করেন বা এককালে করতেন। এছাড়া বাতাসের দূষণ, ধুলো, ধোয়া, ইত্যাদি যা আমাদের ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি করে তাদের জন্যেও এই রোগটি দেখা দিতে পারে।’ ২০০২ সাল থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দিবসটি প্রতিপালিত হয়ে আসছে। এবারের থিম- ‘আসুন, সিওপিডি প্রতিরোধ করিÑ সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন গড়ি।’

বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশরারফ হোসেন বলেন, সিওপিডি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এই রোগটি প্রতিরোধে গ্রামে-গঞ্জে পরিবেশবান্ধব চুলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশরারফ হোসেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ ছাড়াও বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২৮ নভেম্বর/এএ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

দেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা, ঢাকা কতটা ঝুঁকিতে?

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস: জানুন মশাবাহিত এ রোগ প্রতিরোধের উপায়

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :